বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা চার দিন ধরে হালকা বৃষ্টি আর বাতাসে নুয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার পাকা আধাপাকা আমন ধানের খেত। ফসলহানীর শ্বঙ্কায় দুঃচিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের কপালে।

জানা গেছে, তিস্তা ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। কৃষি কাজের উপর নির্ভর করে জেলার সিংহভাগ পরিবার। সেই কৃষি নির্ভর জেলার চাষিদের উৎপাদিত উৎতি আমন ধান হালকা বৃষ্টি আর বাতাসে নুয়ে পড়েছে। অনেক খেতে মাটির সাথে মিশে গেছে। কিছু আমন ধান নুয়ে পড়ে ডুবে আছে পানিতে।

কৃষকরা জানান, কয়েক দিন ধরে হালকা বৃষ্টির সাথে বাতাস বৈছে গোটা জেলা জুড়ে। এতে উৎতি আমন ধানের খেতে নুয়ে পড়েছে মাটিতে। কিছু খেতে ডুবে আছে পানিতে। যা আর ঘরে তোলার মত নয়। নুয়ে পড়া পাকা ধান কেটে নিলেও আধাপাকা ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু হলেও পুরোদমে ধান মাড়াই শুরু হতে আরও ২০/২৫ দিন লাগবে। এই অল্প সময় পড়ে এসব ধান ঘরে তোলা যেত। এ সময় বৃষ্টি আর বাতাসে নষ্ট হলো উৎতি আমন ধান। এমন কি পঁচে নষ্টের আশংকা করছেন গবাদির পশুর খাদ্য ধানগাছ তথা খড়। ঋণ পরিশোধ আর উৎপাদন খরচ তো দুরের কথা পরিবারের খাবার যোগান নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

কিছু কৃষক নুয়ে পড়া ধান গাছগুলো দাঁড় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ খেতে থেকে পানি বের করে দিচ্ছেন। সব মিলে নষ্টের পথে থাকা কষ্টের ফসল রক্ষায় আপ্রান চেষ্টাও করছেন চাষিরা। প্রশ্ন শুধু একটাই, শেষ রক্ষা হবে তো? গবাদি পশুর জন্য খড়টুকু যদি পাই।

উৎতি আমনে এত বড় ক্ষতি কৃষক পরিবারে আঁধার নেমে আসলেও দেখা মিলছে না কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের। তারা কৃষকদের ক্ষতির তালিকাও তৈরি করছেন ঘরে বসে থেকে। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধে কৃষকদের এ অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। তবে বৃষ্টি আর বাতাসে নুয়ে পড়া আমন খেতের ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা প্রনায়ন করা হচ্ছে।

সিন্দুর্না ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক এরশাদ আলী বলেন, গেল বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি থেকে বেঁচে যাওয়া অংশও বৈরি আবহাওয়ার বাতাস আর বৃষ্টিতে নুয়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে আমন খেত। কৃষকের বিপদ চার দিকে। এ বার না খেয়ে বুঝি মরতে হবে। ধান তো আর ঘরে তোলা হচ্ছে না।

মহিষখোচার কৃষক সহির উদ্দিন বলেন, একটা ধানের গাছও দাড়িয়ে নেই। সবগুলো নুয়ে পড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। ১০/১৫ গেলে এসব ধান ঘরে তোলা যেত। এখন তো অর্ধেকেই মাটিতে পড়ে পঁচে নষ্ট হবে। কিছু পাওয়া যেতে পারে। যেসব ক্ষেতে ডুবে আছে তার খড়ও মিলবে না গরুর জন্য। সব মিলে এবার আমনে চরম মুল্য দিতে হলো। আলুর মত আমনেও লোকসান গুনতে হবে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শাইখুল আরেফিন বলেন, চলতি বছর জেলার ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ায় নুয়ে পড়া আমন খেতের ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা প্রনায়ন করা হচ্ছে। কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যেসব ধান নুয়ে পড়েছে, সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিলে কিছুটা ক্ষতি কমাতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: শিহাব আহমেদ

Sokal News | সকাল নিউজ is a youth-led online news and media portal dedicated to delivering accurate, timely, and impactful news. Driven by a passion for truth and transparency, our mission is “সত্যের আলোয় প্রতিদিন” (“In the light of truth, every day”). Stay connected with us for trustworthy news coverage from a fresh perspective.

প্রধান কার্যালয়:
সকাল নিউজ, ই-১৭/৬, চায়না টাউন, ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০

© 2025 সকাল নিউজ. সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত Shihab Group.
Exit mobile version