একটি ‘বিশ্বমোড়ল’ ও দুটি আঞ্চলিক শক্তি বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ‘মত প্রকাশ থেকে মৃত্যু: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের বিস্তার ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে যে বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত তা হচ্ছে, পৃথিবীতে তিনটি শক্তি আমাদের এখানে প্রভাব বিস্তার করার জন্য চেষ্টা করছে। দুটি আঞ্চলিক শক্তি, পরাশক্তিও বটে তারা এবং একটি বিশ্বমোড়ল। সবাই এখানে একটা হেজেমোনি (আধিপত্য) সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। প্রত্যেকেরই ইন্টারেস্ট (স্বার্থ) আলাদা আলাদা। কিন্তু আমাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তিনটার দ্বারাই একইভাবে।’
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা–কর্মীদের নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ‘মত প্রকাশ থেকে মৃত্যু: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের বিস্তার ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।
আবরার ফাহাদকে ‘আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আবরার শহীদ হয়েছে, কারণ সে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে হয়তো জেলে যেতে হতো, কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বললে জীবন দিতে হয়- এটাই আবরার হত্যার শিক্ষা।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংগ্রাম একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের সিঁড়ি নির্মাণ করেছি আবরারের মতো শহীদদের রক্ত দিয়ে। ৪২২ জনের বেশি ছাত্র, যুব, বিএনপি নেতা–কর্মীর রক্ত এই সিঁড়ির ভিত্তি। এই সংগ্রাম শুধু কোনো দলীয় নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন।’
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এ সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখার জন্যই বিএনপি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নীতি গ্রহণ করেছে। সবার আগে বাংলাদেশ—এটি শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্রদর্শন। পররাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক চুক্তি কিংবা রাজনীতির যেকোনো সিদ্ধান্তে এই নীতিই হবে আমাদের মাপকাঠি।’
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে হলে ছাত্রসমাজকে মেধা, তাত্ত্বিক জ্ঞান ও দেশপ্রেমে সমৃদ্ধ হতে হবে বলে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা চাই, ছাত্রসংগঠনগুলো মেধাবীদের নেতৃত্বে আসুক। যারা কলম দিয়ে, চিন্তা দিয়ে, প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে। যদি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তাহলে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বার্থে অসংখ্য মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে যেন আর রক্ত দিতে না হয়, সে লক্ষ্যেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা চাই না মুক্তির মন্দিরে নতুন প্রাণ বলিদান হোক। কিন্তু যদি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বিপন্ন হয়, তাহলে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত। তবে সেই পরিস্থিতি যেন আর না আসে, সে জন্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘খুনি হাসিনার আমলে ছাত্রদলসহ বিরোধী মতের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং যাঁরা শাহাদাত বরণ করেছেন, আমরা তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তাঁদের আত্মত্যাগকে হৃদয়ে ধারণ করেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ করে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘যত দিন শহীদ আবরার ফাহাদকে স্মরণ করার প্রয়োজন থাকবে, তত দিন আমরা এই স্মরণসভা করব, রাজপথে থাকব, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা সভা-সেমিনার থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই- এই মুনাফেকি ও গুপ্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদল দৃঢ় অবস্থানে থাকবে।’
ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহসসহ সংগঠনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও ঢাকা মহানগর শাখার নেতারা।
সকাল নিউজ/এসএফ