সংবিধান সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো সংসদে সংশোধিত হবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘তার আগে যদি কোনো বৈধ, আইনানুগ বা সাংবিধানিক পন্থা কেউ আবিষ্কার করতে পারেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও জাতীয় স্বার্থে আমরা তার সঙ্গে একমত হব। কিন্তু আমরা এমন কোনো বাজে প্রিসিডেন্ট (নজির) তৈরি করতে চাইছি না, যেটা দুই বছর-পাঁচ বছর পরে আবার কেউ প্রয়োগ করার চেষ্টা করবে।’
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক গোলটেবিল বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শিরোনামে এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়নে বিচার বিভাগের মতামত নেওয়া যেতে পারে। তবে আগে সবার একমত হতে হবে সেটা আমরা মানব। সেটা মানতে যাতে একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকে। এই অবস্থায় এসে যদি আর কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে, সেটা আমরা পর্দার আড়ালেও আলোচনা করতে পারব। প্রয়োজনে পর্দার অন্তরালেও আমরা আলোচনা করব জাতির স্বার্থে।’
তবে তিনি এও বলেন, ‘এটা তো রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। এটা নিয়ে বিচার বিভাগের কী বলার আছে? বিচার বিভাগ তো আইনসভাকে নির্দেশ দিতে পারে না, পরামর্শ দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য সব সময় রাজি। যে বিষয়গুলো সনদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেই সব বিষয় সম্পর্কে আমাদের অবজারভেশন ছিল। কিন্তু নতুন করে আবার কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত কেন করা হলো? বারবার যদি নতুন ফ্রন্ট খোলা হয়, কতবার আমরা কারেকশন করব?’
তিনি বলেন, ‘যে পয়েন্টগুলোতে আমরা রাজি হলাম, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে অসুবিধা নেই শুধু সাংবিধানিক বিষয়গুলো ছাড়া। আমরা একটা কমিটমেন্টে (অঙ্গীকার) আসতে পারি। সেই কমিটমেন্ট থেকে যাতে কেউ না সরতে পারে। পরবর্তী সময়ে যারাই সংসদে যাবে, তারা যেন এটা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংস্কার এবং বিচার বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না-এ রকম অনেক বক্তব্য আসছে। নির্বাচন ও সংস্কার বা বিচার—এগুলো তো মিউচুয়ালি ইন্টারডিপেন্ডেন্ট (পরস্পর নির্ভরশীল) নয়। বিচার সমাপ্ত হতে অনেক সময় লাগবে, এটা চলবে। বিচারের জন্য যদি আমরা কোনো টাইমলাইন নির্ধারণ করি, সেটা অবিচার হবে।’
আগামী রমজান শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে এমনটা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, এই নির্বাচন ১৬ বছরের অবিরাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল। ভোটাধিকারের আকাঙ্ক্ষা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে এক নম্বর। কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা ও স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ ভুলে গেলে সেটা আত্মঘাতী হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘পিআরের মাধ্যমে যদি দুর্বল সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়, দেশে কোনো দিন স্থিতিশীলতা আসবে না। নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে দেওয়ার মতো কোনো সংস্কার করতে চাইলে দেশে কোনো দিন মানুষের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে না।’
আলোচনায় আরো অংশ নেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, ঢাবি অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
সকাল নিউজ/এসএফ


