আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘যে যেটেই বলুক, আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করব। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র বিরোধের মধ্যে সরকার কী করবে বুঝতে পারছে না। ২৭০ দিন আলাপ আলোচনার পর যদি আপনাদের ঐকমত্য না আসে, এখন আমরা আসলে কীভাবে কী করব, এটা নিয়ে সত্যি আমাদের একটু চিন্তা করতে হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে। তাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোটা দাগে দুই ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে।
প্রথমত, সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া; দ্বিতীয়ত হলো, গণভোটের দিনক্ষণ। জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে দেশে নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অপরদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। এর বাইরে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, যে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছিল, তার বাইরে অনেক বিষয় এখানে যুক্ত করা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একাধিক উপদেষ্টা এ বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এতে কোনো সমাধানে আসতে পারেনি সরকার। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপদেষ্টাদের একটি অংশ বলেছে, পরবর্তীতে এ নিয়ে আরও আলোচনা করতে হবে।
কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আবার আলোচনা করতে হবে। কারণ, এই তীব্র বিরোধের মধ্যে সমঝোতা দলিল পাশ করা সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ হবে। কয়েকজন উপদেষ্টা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা যে সিদ্ধান্ত নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকতে হবে।

এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। তবে অনৈক্যের বিষয়গুলোর একটা হচ্ছে- আপনারা জানেন ঐকমত্য কমিশন দুইটা বিকল্প দিয়েছে; একটা হচ্ছে আপনার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ তারপর গণভোট; তারপরে ২৭০ দিনের মধ্যে না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। এরকম কোনো নজির আছে কি না বা এটা আদৌ সম্ভব কি না এটা আমরা দেখব।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটা হচ্ছে এই দায় দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। এই দুইটা বিকল্পের মধ্যে কোনটা আসলে বেশি গ্রহণযোগ্য, সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। আর গণভোট কবে হবে, ওটা নিয়ে বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বোধ হয়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দলগুলোকে এত আলোচনার সময় দেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা যেই অনৈক্য দেখাচ্ছে তাতে জুলাইয়ের স্পিরিটকে (চেতনা) তারা কোথায় নিয়ে গেছে, এটা তাদের বিবেচনা করা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এককভাবে তাদের অবস্থান নেওয়ার জন্য সরকারকে জোর করে, তার মানে হচ্ছে তাদের মধ্যে ঐকমত্য নেই। তারা চাচ্ছে, সরকার যেন তাদের দলীয় অবস্থান নেয়।’

তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত সংসদের সংস্কার করার কোনো দায়–দায়িত্ব থাকবে না, সব অন্তর্বর্তী সরকারকে করে যেতে হবে এত কোনো বেদবাক্য নয়। সরকার যতটুকু পারে করবে। সম্ভব হলে সবই করবে। তবে তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য লাগবে।

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সকাল নিউজ/এসএফ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শিহাব আহমেদ

Sokal News | সকাল নিউজ is a youth-led online news and media portal dedicated to delivering accurate, timely, and impactful news. Driven by a passion for truth and transparency, our mission is “সত্যের আলোয় প্রতিদিন” (“In the light of truth, every day”). Stay connected with us for trustworthy news coverage from a fresh perspective.

প্রধান কার্যালয়:
সকাল নিউজ, ই-১৭/৬, চায়না টাউন, ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০

© 2025 সকাল নিউজ. সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত Shihab Group.
Exit mobile version