আশরাফুল হককে ত্রিভুজ প্রেমের কারণে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীতে ড্রামের ভেতর থেকে খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ডিবি।
অপরদিকে, আশরাফুলের প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুরকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছে, আশরাফুলকে ফাঁদে ফেলে জরেজুল ও শামীমা ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে তাকে হত্যা করা হয়। আইন-শৃংখলাবাহিনীর পাওয়া দু’রকম তথ্যে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল।
গত ১৩ নভেম্বর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশের পড়ে থাকা ড্রাম থেকে ২৬ টুকরো মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তার পরিচয় সনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে নিহতের পরিবার।
শুক্রবার কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মূল আসামি জরেজুলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
এ ঘটনায় শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ত্রিভুজ প্রেমের কারণে আশরাফুলকে বুধবার দক্ষিণ দনিয়ার ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়। লাশ নিয়ে সারারাত ওই বাসায় কাটান জরেজুল ও শামীমা। পরদিন তারা ড্রামে করে খণ্ডিত লাশ হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে ফেলে যায়।
ডিবি প্রধান জানান, জরেজুল মালয়েশিয়া প্রবাসী। মাস দেড়েক আগে তিনি দেশে আসেন। বিদেশে থাকাকালে জরেজুল একটি অ্যাপের মাধ্যমে কুমিল্লার প্রবাসীর স্ত্রী শামীমা ইসলামের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। দেশে ফেরার পর জরেজুলের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারলে সংসারে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। ফলে বন্ধু আশরাফুলকে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ করে শামীমার মোবাইল নম্বর আশরাফুলকে দেন জরেজুল। কিন্তু পরবর্তীতে আশরাফুল নিজেই শামীমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
ডিবি জানায়, নিহত আশরাফুল তার বন্ধু জরেজকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জাপান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে শামীমার ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিলো। মূলত এই টাকার সংস্থান এবং শামীমার সাথে/ একান্তে দেখা করার আশায় /দুই বন্ধু একত্রে /রংপুর থেকে গত মঙ্গলবার/ ঢাকায় আসেন।
তখনই শামীমার সঙ্গে আশরাফুলের সম্পর্কের কথা জেনে যান জরেজুল। এ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ফিরে দেখেন, আশরাফুল ঘুমাচ্ছে। তখন তিনি ঘরে গোপনে অবস্থান নেন।
পরে আশরাফুল ঘুম থেকে জেগে বিকৃত যৌনাচারের জন্য শামীমাকে জোর করতে থাকলে শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেন। এরমধ্যে জরেজ বেরিয়ে এসে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে বাড়ি দেন। তিনি চিৎকার করতে থাকলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন। একপর্যায়ে আশরাফুল মারা যান।
ডিবি প্রধান বলেন, বুধবার সারারাত জরেজুল ও শামীমা লাশের সাথেই একই বাসায় অবস্থান করেন। পরদিন সকালে দু’জনে পরিকল্পনা করেন লাশ গুম করার। বাজার থেকে দুইটি প্লাস্টিকের ড্রাম, পলিথিন ও লাশ কাটার জন্য স্থানীয় দোকান থেকে একটি চাপাতি কিনে আনা হয়। মৃতদেহ বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করা হয়। দুপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে লাশ নিয়ে হাইকোর্ট এলাকায় ফেলে যান তারা।
এদিকে, শুক্রবার জরেজুলের প্রেমিকা শামীমাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ঘটনায় আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানিয়েছে, প্রেমিকাকে দিয়ে ফাঁদে ফেলে আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন জরেজুল। এই টাকার মধ্যে ৭ লাখ টাকা নেবেন জরেজুল এবং শামীমা নেবেন ৩ লাখ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাসখানেক আগে শামীমা ফোনে আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন।
গত মঙ্গলবার জরেজুল নিহত আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরদিন জরেজুল ও আশরাফুল ও শামীমা শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন করে ফেলেন। তখন আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেধে ফেলা হয় এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়।
এরপর জরেজুল অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত হয়ে অচেতন থাকা আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস নিতে না পেরে আশরাফুল মারা যান।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর নয়াপাড়া আল মাহফুজ মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আশরাফুলের খণ্ডিত মরদেহ দাফন করা হয়।
সকাল নিউজ/এসএফ


