জাল দলিলে নামজারি করে জমি জবর দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে। জমি পুনরুদ্ধারে থানা-পুলিশসহ স্থানীয় গণ্যমান্যমের দারস্থ হয়েও জমি উদ্ধার করতে পারেনি বলে দাবি করেছে স্থানীয় দরিদ্র একটি পরিবার।
জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের রামকান্ত গ্রামের চ্যাংরামের নিকট থেকে নরকান্ত রায় ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সালে ৮৫ শতাংশ জমি ২৫০৫ নম্বর দলিল মূলে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ সালে একই এলাকার আব্দুল করিম ৫৭৯৬ নম্বর দলিল মূলে নরকান্তের কাছ থেকে ৩৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেন।
এ জমি একযুগ ভোগদখল করা অবস্থায় জীবিকার তাগিদে টাঙ্গাইলে চলে যান করিম। যাওয়ার সময় কিছু টাকা নিয়ে প্রতিবেশী অতুল চন্দ্রের কাছে ওই জমি বন্ধক রেখে যান তিনি। জমি বন্ধক নেওয়ার ৫ বছর পর রংপুরে চলে যান অতুল। যাওয়ার সময় প্রতিবেশী ওয়াহেদ আলীর ছেলে ময়নাল হকের নিকট করিমের জমি পুনরায় বন্ধক রাখেন অতুল।
ময়নাল ওই জমি দখলে নিয়ে বসতবাড়ি করে অবশিষ্ট জমি চাষাবাদ করতে থাকেন। প্রায় ১০ বছর পর করিম ফিরে এসে দেখেন বেহাত হয়ে গেছে তার জমি। দখলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে; জমি অতুলের কাছে কিনে নেওয়ার কথা জানায় ময়নাল। জমি ফিরে পেতে দীর্ঘদিন একাধিকবার চেষ্টা করেও কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে থানায় অভিযোগ দেন করিম। এই সময় ময়নাল জমি ক্রয়ের উপযুক্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। একপর্যায়ে ওই জমি করিমের নিকট থেকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করেন ময়নাল। এভাবে দীর্ঘদিন পার করে পুরো জমির জাল দলিল তৈরি ও নামজারি করে এ বছরের গত ২৩ জুন জমিটি নিজের নামে নেন ময়নাল।
পরবর্তীতে বিষয়টি জানতে পেরে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট এ নামজারির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন করিম। সহকারি কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন তহসিলদারকে নির্দেশ দেন। তহসিলদার রেজাউল আলম গত ০৭ আগস্ট ২১৫৬ নম্বর দলিল জাল ও ময়নালের কাগজপত্র বৈধ নয় উল্লেখ করে রিপোর্ট দেন। এতে গত ২০ আগস্ট ময়নালের নামে করা জমির নামজারি বাতিল করে দেন এবং জমি মূল হোল্ডিং এ ফেরত নেওয়ার আদেশ দেন।
এ ব্যাপারে আব্দুল করিম বলেন, ‘জীবিকার জন্য টাঙ্গাইল যাওয়ার সময় প্রতিবেশী অতুলের কাছে কিছু টাকা নিয়ে জমি বন্ধক রেখেছিলাম। এসে দেখি অতুল নাই, জমি দখল করেছে ময়নাল। জমি উদ্ধারে অনেকের কাছে গিয়েও কোনো কাজ হয়নি। আমরা গরীব মানুষ কি করবো, ভেবে পাচ্ছিনা।’
বিষয়টি নিয়ে ময়নাল হক বলেন, ‘আমি জমি কিনেছি। দীর্ঘদিন যাবত ওই জমি ভোগদখল করে আসছি। জমির নামজারি করেছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আছে। কেনো জমি ছেড়ে দিব।’
সহকারি কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ, ‘ময়নাল হক জাল দলিল করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় তার নামজারি বাতিল করা হয়েছে। আর যদি জাল দলিলের মাধ্যমে নামজারি করতে আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকে ও অনিয়ম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সকাল নিউজ/এসএফ
