দেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি, মার্কসবাদী চিন্তক, শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার এর স্মরণে ২৯ আগস্ট ২০২৫, বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুরুতে অধ্যাপক যতীন সরকারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন ও দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীবৃন্দ। অধ্যাপক যতীন সরকারের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য একরাম হোসেন।
দেশের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক কর্মীদের প্রেরণাদায়ী শিক্ষক, আজীবন জ্ঞান ও মুক্তির আন্দোলনের পথপ্রদর্শক অধ্যাপক যতীন সরকারের জীবন, চিন্তা ও কর্ম নিয়ে শোক সভায় উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ- সভাপতি ইকরামুল কবির ইল্টু’র সভাপতিত্বে আলোচনা করেন- , সিপিবি সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিশু-কিশোর সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী, লেখক ও এক্টিভিস্ট বাকী বিল্লাহ, গণতান্ত্রীক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সদস্য অভিজিৎ রায়, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ- সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রাসুল মামুন এবং আমিনুর রহমান হিরু।
অধ্যাপক যতীন সরকারের স্মরণে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ- সভাপতি ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির আহ্ববায়ক জুলফিকার আহমেদ গোলাপ এর লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান।
এছাড়াও অধ্যাপক যতীন সরকারের মেয়ে সুদীপ্তা সরকারের প্রেরিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুমি দে।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক যতীন সরকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একক সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী আবদুল ওয়াদুদ ও উদীচীর নিজস্ব শিল্পী মায়েশা সুলতানা উর্বি এবং একক কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী দীপক সুমন ও মৌমিতা জান্নাত।
অধ্যাপক যতীন সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও স্মৃতিচারণ করে আলোচকগণ বলেন, ‘যতীন সরকার রাজনীতী করতেন তিনি নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তিনি তাঁর প্রশস্ত বুকে সমমতাদর্শের সবাইকে ধারন করতেন। তিনি ছিলেন একজন আজীবন বিপ্লবী।’
তারা বলেন, ‘তিনি বরাবরই গ্রামে বাস করেছেন কিন্তু সেখান থেকেই তিনি তাঁর আদর্শ, চিন্তা ও কর্ম দিয়ে সারা দেশকে যুক্ত করেছেন তাঁর চিন্তা ও দর্শনের সাথে, যা খুব কমই দেখা যায়। অধ্যাপক যতীন সরকার দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত চারণের মত ছুটে বেরিয়েছেন এবং উদীচী সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের তত্ত্বীয় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে গেছেন। ফলে গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রজন্মের চিন্তা ও মননে অধ্যাপক যতীন সরকারের চিন্তার ছাপ পড়েছে।’
আলোচকগন আরও বলেন, ‘যতীন সরকার মনে করতেন সমাজের সুবিধাভোগী অংশটিই হচ্ছে সংখ্যালঘু পক্ষান্তরে যারা সুবিধা বঞ্চিত, শোষিত, নিপীড়িত তারাই সংখ্যাগুরু। কাজেই বাংলাদেশে এই সংখ্যাগুরু বঞ্চিত মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই একমাত্র দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনা সম্ভব।’
বক্তাগণ বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে যতীন সরকারের যে অবদান রেখে গেছেন তা চর্চা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সমাজ বিপ্লব সংঘঠিত করে মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
সকাল নিউজ/এসএফ