বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন মানেই দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে বাড়তি উত্তেজনা। মাঠে যেমন খেলোয়াড়রা লড়াই করেন ব্যাট-বলে, তেমনি বোর্ড ঘিরে ভোটযুদ্ধও কম নাটকীয় হয় না। চলতি বছরের অক্টোবরে আবারও বসছে বিসিবির নির্বাচন-উৎসব।
নির্বাচনকে ঘিরে ক্লাব কর্মকর্তাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে বিসিবিতে। সবাই এখন ব্যস্ত বিসিবির নির্বাচন নিয়ে। যদিও নির্বাচনের তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ঘোষণা করা হয়নি। বিসিবির বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ ৩০ সেপ্টেম্বর। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছিল ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর। পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ রয়েছে আরও এক মাস। ফলে বিসিবির বর্তমান পরিচালকরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন।
২০২৪ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ক্যাটাগরি-২, অর্থাৎ ক্লাবভোটে বড় পরিবর্তন। আগে প্রিমিয়ার লিগ থেকে ১৮ প্রতিনিধি থাকলেও এখন নামানো হয়েছে ১২ জনে। সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রথম বিভাগ (২০), দ্বিতীয় বিভাগ (২৪) ও তৃতীয় বিভাগের (২০) প্রতিনিধি। অর্থাৎ এবার মোট ৭৬ ক্লাব প্রতিনিধি ১২ পরিচালক নির্বাচন করবেন। ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখও তাই বেশি থাকবে এই ক্যাটাগরিতেই।
ক্যাটাগরি-১-এ বিভাগীয় ও জেলা প্রতিনিধিদের ভোটে আসবেন ১০ পরিচালক। তবে ময়মনসিংহ বিভাগ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে ২ জন করে আর রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট থেকে ১ জন করে প্রতিনিধি আসবেন।
ক্যাটাগরি-৩ বরাবরের মতো বৈচিত্র্যময়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, সাবেক ক্রিকেটার, বিকেএসপি, মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, আম্পায়ার-স্কোরার্স সব মিলিয়ে এখান থেকে আসবেন একজন পরিচালক।
২৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত থাকবেন ২ জন। বাকি ২৩ জন তিন ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত হবেন। এই নির্বাচিত পরিচালকরাই ভোট দিয়ে বেছে নেবেন সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি। অর্থাৎ বোর্ডের আসল ক্ষমতা নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ওপর।
নির্বাচনের আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন মাহাবুব আনাম। বিসিবির পরিচিত এই মুখ ২০০০ সাল থেকে বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত। তবে নানা চাপ ও সমীকরণে শেষ পর্যন্ত তিনি সভাপতি পদে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার সরে দাঁড়ানোয় আলোচনায় উঠে এসেছে সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম। মে মাসে বোর্ডে দায়িত্ব নেওয়া বুলবুল শুরুতে বলেছিলেন, তিনি “টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে চান।” কিন্তু এখন ক্রিকেটপাড়া বলছে, তিনি নাকি “টেস্ট খেলতে প্রস্তুত”- মানে সভাপতি পদে লড়তে আগ্রহী।
অন্যদিকে বর্তমান সভাপতি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মাঠপর্যায়ের উন্নয়ন নিয়ে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আঞ্চলিক ক্রিকেট মাঠের জন্য তিনি দৌড়ঝাঁপ করছেন। ফলে তার প্রার্থিতা নিয়েও রয়েছে কৌতূহল।
বিসিবির সভাপতি শুধু ক্রিকেট বোর্ড চালান না, তিনি হয়ে ওঠেন দেশের ক্রিকেটের মুখ। জাতীয় দল থেকে শুরু করে ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো, সবকিছু তার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তাই এ পদকে ঘিরে সব সময় তুমুল প্রতিযোগিতা থাকে।
সব কিছু ঠিক থাকলে অক্টোবরে বিসিবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারিখ ঘোষণার আগেই বোর্ডের ভেতর প্যানেল তৈরি, আলোচনার টেবিলে নাম যাচাই-বাছাই শুরু হয়ে গেছে। ক্রিকেটভক্তরাও অপেক্ষা করছেন- কে হবেন বিসিবির পরবর্তী কর্ণধার?
সকাল নিউজ/এসএফ