যতদিন দায়িত্বে আছেন ততদিন সারের দাম বাড়বে না জানিয়ে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘সারের সংকট আছে বলা হচ্ছে, এটি সঠিক নয়। বেশি টাকা দিলে যদি সার পাওয়া যায়, তাহলে সার অ্যাভেইলেবল।’
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের অর্জন ও সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘সার নিয়ে একটি নীতিমালা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য জাতীয় কমিটিতে যাবে। জাতীয় কমিটির প্রধান শিল্প উপদেষ্টা। উনি বাইরে আছেন, আগামী সপ্তাহে আমরা মিটিং করে অনুমোদনটা দিয়ে দেবো। নীতিমালায় আমরা সারের ডিলারের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছি।’
তিনি বলেন, সারের দাম বাড়ানো হয়নি। সার পাচার হয়। সারের পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সার নিয়ে কথা বলায় কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলেন কাকে এভাবে বদলি করা হয়েছে। সে হয়তো পয়সা খায়, সেজন্য তাকে বদলি করা হয়েছে। কোনো দুর্নীতিবাজকে যখন আপনি শাস্তি দেবেন, বিভিন্ন জায়গায় সে ঘোরাফেরা করবে, সে সেই সময় সুফি সেজে যায়। আমার মতো সুফি আর কেউ নাই। তার বাড়ির হিসাব যদি নিতেন দেখবেন বিল্ডিং তরতর করে উঠে গেছে।’
পেট্রোবাংলা সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা বলেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা জানান, পেট্রোবাংলা যদি গ্যাসের দাম বাড়ায়, তারপর যে সার উৎপাদন হবে, সেক্ষেত্রেও দাম বাড়বে না। অন্তত আমি যতদিন আছি স্যারের দাম বাড়বে না। মাঠ পর্যায়ে সারের সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে বললে আমি ওই জায়গায় অফিসারকে ধরবো।’
কৃষি সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘সারের সংকট নেই। সিস্টেমে অব্যবস্থাপনার বিষয় হয়তো রয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা হয়তো সার আরেক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। আমরা কড়া নজরদারি রাখছি।’
তিনি বলেন, ‘সার কিন্তু পর্যাপ্ত আছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যে সার প্রয়োজন তার সবটাই আমাদের আছে। কিছু সিস্টেমের কারণে সমস্যা হচ্ছে। নতুন নীতিমালার ভিত্তিতে ডিলার নিয়োগ হলে তখন খুচরা বিক্রেতা বলে কিছু থাকবে না। এটার বিস্তারিত আমরা পরবর্তীতে বলবো। সারের ক্ষেত্রে আমরা প্রাইভেট সেক্টরের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছি।’
‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) বেসিসে আমরা যে সারগুলো আনি, সেটার জন্য একটা কমিটি করে আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনা নিয়ে সারের দাম নির্ধারণ করেছি। সেটাকে ধরে আমরা নেগোসিয়েশন করেছি যারা আমাদের টেন্ডারে এসেছিল।’
কৃষি সচিব বলেন, এবার আমরা শুধু একটি টেন্ডারের মাধ্যমে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির জন্য টেন্ডার দিয়েছি, সেখান থেকে সরকারের ২৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটার জন্য হয়তো কারও কারও কিছুটা সংক্ষুব্ধতা ছিল। সংবাদ মাধ্যমে অনেককে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেটা কিন্তু সঠিক না।
তিনি বলেন, সারের ক্ষেত্রে যাতে কারও ওপর নির্ভরতা করে কোনো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়, এটা নিশ্চিত করার জন্যই আমাদের এই ব্যবস্থাগুলো। এতে সরকারের অর্থের অনেক আশ্রয় হয়েছে। সামনের সার ম্যানেজমেন্টে ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হবে না।
সারের পুরো পরিবহন ব্যবস্থাটা অনলাইন হবে জানিয়ে এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘কোন এলাকায় কোন ডিলারের কাছে কী পরিমাণ সারা আছে সেটা আমরা অনলাইন ব্যবস্থায় দেখবো। সারটা কয় ঘণ্টা পর ডিলারের হাতে পৌঁছাবে সেটাও আমরা নিশ্চিত করবো এবং মানুষ দেখতে পাবে। এ কার্যক্রম আমরা নিয়েছি।’
সকাল নিউজ/এসএফ