কৃষিজমি সুরক্ষা একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে জানিয়ে ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষিজমি শুধু উৎপাদনের ক্ষেত্র নয়, এটি আমাদের জীবিকা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির প্রাণ।’
তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও অবকাঠামো সম্প্রসারণের ফলে কৃষিজমি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে আজ কৃষিজমি সুরক্ষা একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। অথচ, দেশিয় খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ স্থিতিশীলতা সরাসরি কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভূমি জোনিং একটি কার্যকর নীতিগত হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিষয়ক খসড়া পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ.এস.এম সালেহ আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে কৃষিজমি হ্রাস এবং অবৈধ বা অনুপযুক্ত ব্যবহারের সমস্যার সমাধানে ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ শীর্ষক খসড়া প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এই অধ্যাদেশের লক্ষ্য হলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, কৃষিজমি সংরক্ষণ, পরিকল্পিত ভূমি জোনিং এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
তিনি বলেন, ‘ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি জাতীয় টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত। সঠিক নীতি, সচেতনতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে একটি পরিবেশবান্ধব ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এই অধ্যাদেশে ভূমি জোনিং-এর ১৪টি শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।’
খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে, ভূমি, বনভূমি ও অন্যান্য বিশেষ শ্রেণির ভূমির সুরক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ (১৯৫১ সনের ২৮ নং আইন)-এর ৮৩ ধারায় যাহাই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে সংজ্ঞায়িত সকল কৃষি ভূমি সুরক্ষা করতে হবে। কৃষিজমি ব্যতীত অন্যান্য জমিও এই আইনের বিধান অনুযায়ী সুরক্ষা করতে হবে। অনুমতি ব্যতীত কৃষি ভূমি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না, শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না, কিংবা এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না যাতে কৃষি ভূমির শ্রেণি পরিবর্তিত হয়ে যায়।
এছাড়া, এ অধ্যাদেশে অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। দ্রুতই এই অধ্যাদেশ কার্যকর করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সকাল নিউজ/এসএফ