বহু বছর ধরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। কিন্তু কখনোই তার রাজনৈতিক উচাকাঙক্ষা চোখে পড়েনি। তাকে রাজনীতির পথে ধাবিত করেন বিদেশিয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম চৌধুরী।
নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’কে অর্থায়ন করেন এই ‘রহস্য মানব’। নতুন দলের জন্য তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়মিত অর্থও জোগান দিতেন তিনি। এনায়েত করিম চৌধুরীকে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
গ্রেফতার হওয়া এনায়েত করিমকে বুধবার ৪৮ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কর্মকর্তারা। জারা জানান, জনতা পার্টি আত্মপ্রকাশের সঙ্গে এনায়েত করিম চৌধুরী শুরু থেকে জড়িত এবং এই দল গঠন থেকে শুরু করে পার্টি পরিচালনার জন্য বেশিরভাগ অর্থই জোগান দিতেন রহস্যময় এই মার্কিন নাগরিক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আক্তার মোর্শেদ বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন ও তার নবগঠিত দলের সঙ্গে এনায়েতের যোগাযোগের সত্যতা রয়েছে। দল গঠনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এনায়েত এই দলে প্রতি মাসে সাড়ে ৩ লাখ করে টাকা দিতেন। বাকি টাকা ইলিয়াস কাঞ্চন নিজে জোগাড় করতেন। ইলিয়াস কাঞ্চন দেশের বাইরে থাকায় এ তথ্য তার বক্তব্যের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি।’
এনায়েতকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এনায়েত করিম বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মিশন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এসে ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করতে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে এনায়েত করিম সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। তাকে দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।’
জানা গেছে, ২৫ এপ্রিল চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’। দলটির দলীয় স্লোগান-গড়ব মোরা ইনসাফের দেশ।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে ইলিয়াস কাঞ্চনকে মুঠোফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে ইলিয়াস কাঞ্চনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাইর সাবেক মহাসচিব লিটন এরশাদ বলেন, ‘স্যার দেশে নেই। উনি লন্ডনে থাকায় তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যাবে না।’
রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়ায় গাড়িতে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় গত শনিবার সকালে গ্রেফতার হন এনায়েত করিম। বিশেএনায়েত করিমমান্ড শেষে তাকে আবার আদালতে তোলা হয়। এরপর ফের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর আক্তার মোর্শেদের আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হক রিমান্ডের আদেশ দেন। বুধবার এনায়েতের সঙ্গে আদালতে তোলা হয় বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া গোলাম মোস্তফা আজাদকেও। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সকাল নিউজ/এসএফ