বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন আদালত। জয় বাংলা ব্রিগেডের জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শুনানিতে এ আদেশ দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে মামলার বাদী সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. এনামুল হক মামলার আসামি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত বাদীর আবেদন গ্রহণ করে আসামীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
একই দিন বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশ গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল না করায় আগামী ৯ অক্টোবর গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেছে আদালত।
শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ আসামিরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলম, জয়বাংলা বিগ্রেডের সদস্য কবিরুল ইসলাম, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, এলাহী নেওয়াজ মাছুম, জাকির হোসেন জিকু, প্রফেসর তাহেরুজ্জামান, এ কে এম আক্তারুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা সাবিনা ইয়াসমিন, আজিদা পারভীন পাখি, শাহীন, এডভোকেট এএফএম দিদারুল ইসলাম, মাকসুদুর রহমান, সাবেক এমপি সৈয়দ রুবিনা আক্তার, সাবেক এমপি পংকজ নাখ, লায়লা বানু, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, রিতু আক্তার, নুরুন্নবী নিবির, সাবিনা বেগম ও শরিফুল ইসলাম রমজান।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মিটিংয়ে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ গঠন করে একটি গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে পলাতক শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বুঝিয়ে দেয়া এবং তা নিশ্চিতকরণের জন্য শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাবেন বলে অনেকেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মোট ৫৭৭ জন অংশগ্রহণকারী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উক্ত জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে এবং শেখ হাসিনার সমস্ত নির্দেশ পালন করার ব্যাপারে একাগ্রচিত্তে মত প্রকাশ করেন।
ড. রাব্বি আলমের (যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি) হোস্টিং এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হোস্ট, কো-হোস্ট ও অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীদের কথোপকথনে ভয়েস রেকর্ড পর্যালোচনায় ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামক প্লাটফর্মে দেশ-বিদেশ থেকে অংশগ্রহণকারীগণ বৈধ সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা করতে দিবে না মর্মে আলোচনা হয়।
সেই সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মিটিং এ বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার জন্য গৃহযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের সুস্পষ্ট উপাদান রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. এনামুল হক। এরপর সিআরপিসির ১৯৬ ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে সিআইডির এই কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১৪ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. এনামুল হক।
আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে সকল আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন। তথ্যসূত্র- বাসস।
সকাল নিউজ/এসএফ