আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও মৃত্যুর পুণ্যময় দিন। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী যথাযথ সম্মানের সাথে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে পালিত হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)।

দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সবার মধ্যে অপার শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

বাণীতে তিনি বলেন, ‘সমগ্র মুসলিম উম্মার ঐক্য আরও সুসংহত হোক। মহানবী (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ লালন ও অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি সুনিশ্চিত হোক, এই কামনা করি।’

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আঞ্জুমানে রহমানিয়ার মাইজভান্ডারির সভাপতি ও বিএসপি চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে লাখো নবীপ্রেমী সুফিবাদী জনতার অংশগ্রহণে জাঁক-জমকভাবে জশনে জুলুস র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিমদিক থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি দোয়েল চত্বর, শিক্ষা ভবন ও কদম ফোয়ারা সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার পশ্চিম গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।

৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’র যুগ। কেননা, ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা।

তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।

মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ২৫ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুর আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।

পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক বাণীতে বলেন, ‘মহানবী (সা.) মানবতার মুক্তি, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা আজও আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি শিখিয়েছেন, ন্যায়বিচার কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সমগ্র মানবজাতির মৌলিক অধিকার।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ। মহানবী (সা.) তার জীবদ্দশায় মদিনার সনদের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পারস্পরিক সহনশীলতা সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তার এই শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যের চর্চার মাধ্যমেই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন। তারেক রহমান বলেন, ‘সমাজে অবহেলিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত ও দুঃখী মানুষের সেবা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, পরমতসহিষ্ণুতা, দয়া ও ক্ষমা গুণ, শিশুদের প্রতি দায়িত্ব এবং নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অতুলনীয়। তাই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে স্বীকৃত। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগের মহিমার প্রতিফলন আমরা সবাই যেন নিজেদের জীবনে ঘটাতে পারি।’

বছরজুড়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা ও চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ ছাড়া মানবজাতির কল্যাণ সম্ভব নয়। তাকে খণ্ডিতভাবে অনুসরণ করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে না। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া কারো জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ নেই।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
এ উপলক্ষ্যে বায়তুল মোকাররমে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশও নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটি।

সকাল নিউজ/এসএফ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শিহাব আহমেদ

Sokal News | সকাল নিউজ is a youth-led online news and media portal dedicated to delivering accurate, timely, and impactful news. Driven by a passion for truth and transparency, our mission is “সত্যের আলোয় প্রতিদিন” (“In the light of truth, every day”). Stay connected with us for trustworthy news coverage from a fresh perspective.

প্রধান কার্যালয়:
সকাল নিউজ, ই-১৭/৬, চায়না টাউন, ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০

© 2025 সকাল নিউজ. সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত Shihab Group.
Exit mobile version