কিছু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ স্বার্থসিদ্ধির জন্যই নানাভাবে বাংলাদেশকে অস্থির করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, ‘চলমান এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এর চেয়ে আর কোনো জঘন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমরা দেখি নাই। প্রতিদিন জান হাতে নিয়ে বের হতে হচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আজ নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সারা দেশে অব্যাহতভাবে শিক্ষকদের ওপর নিপীড়ন-হামলা-চাকুরিচ্যুতি, মব ও গণহারে অযৌক্তিক মামলা, নাগরিকদের অধিকার আদায়ের নানা কর্মসূচিতে সংঘবদ্ধ হামলা, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের ওপর সেনা-পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাতে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এ সমাবেশের আয়োজন করে।

এতে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘জুলাইয়ের পর থেকে দাবি ছিল জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করার। কিন্তু সেই তদন্ত ও বিচার হতে দেখা যায়নি। ফলে সাধারণ মানুষকে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে দেখা গেছে গত এক বছরে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহলের একধরনের প্রতিযোগিতা। তারা এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার যে ফাঁক রয়েছে, সেটুকু কাজে লাগিয়েছে। তাদের বিশেষ স্বার্থসিদ্ধির জন্যই তারা নানাভাবে বাংলাদেশকে অস্থির করেছে।’

‘গণ-অভ্যুত্থান ছিল মানুষের ক্ষোভ’ উল্লেখ করে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘এখন এক বছর পার হয়ে গেছে। এখন কিন্তু শান্তির সময়, এখন কিন্তু নির্মাণের সময়। এখন আর এসব কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না।’

২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লাঞ্ছিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানের (কার্জন) প্রসঙ্গ টানেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, ‘ডিআরইউতে মত প্রকাশ করতে গিয়ে, একটা প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আরেক সহকর্মী নানা রকম বিভিন্ন ইন্টারেস্ট গ্রুপের (স্বার্থান্বেষী মহল) কাছে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। সেই লাঞ্ছনার বিপরীতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন একটা টুঁ শব্দও করছে না। তখন বোঝা যায়, বিগত সময়ের যে স্বার্থবাদী প্রশাসন ছিল, তার সঙ্গে এখনকার প্রশাসনের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।’

সামিনা লুৎফা বলেন, তারা এখনো তাদের যার যার রাজনৈতিক স্বার্থকেই সামনে তুলে ধরছে। তাদের যার যার রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রমাণ করার জন্য এখানে নানা কিছু খেলা তারা খেলছে। তার মানে আসলে শিক্ষকের স্বার্থ রক্ষা করবে কে? শিক্ষকের স্বার্থ রক্ষা করার মতো একটা শিক্ষক সমিতি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকর নেই।’

গত এক বছরে বাউল, মাজার, নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ ভিন্ন মতবাদের মানুষের ওপর আক্রমণ হলেও সরকার ও রাষ্ট্রকে নিশ্চুপ, নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে লাঠিপেটার ঘটনার তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নুরুল হকের ওপর নির্মম আক্রমণের বিরুদ্ধে চারদিকে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। এরপর আর এই সরকার, সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নাই।’

এ রকম নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভেতরে আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান তিনি। অধ্যাপক লুৎফা বলেন, ‘এই শঙ্কা যদি দূর করতে হয় তাহলে অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যে ভয়ংকর মব সংস্কৃতির চাষাবাদ চলছে, তা এই মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নানাভাবে আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা খানম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদ।

সকাল নিউজ/এসএফ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শিহাব আহমেদ

Sokal News | সকাল নিউজ is a youth-led online news and media portal dedicated to delivering accurate, timely, and impactful news. Driven by a passion for truth and transparency, our mission is “সত্যের আলোয় প্রতিদিন” (“In the light of truth, every day”). Stay connected with us for trustworthy news coverage from a fresh perspective.

প্রধান কার্যালয়:
সকাল নিউজ, ই-১৭/৬, চায়না টাউন, ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০

© ২০২৫ সকাল নিউজ. সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত Shihab Group.
Exit mobile version