প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অভিন্ন ও দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল অগ্রাধিকার।
শনিবার (২২ নভেম্বর) ঢাকায় সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলাপকালে তিনি একথা বলেন। এদিন দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তারা।
উভয় নেতা বাণিজ্য, জ্বালানি, শিক্ষা, পর্যটন, ইন্টারনেট সহযোগিতা, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, পানিসম্পদ, বিনিয়োগ এবং বিমান চলাচলসহ বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা প্রথমে ৩০ মিনিটের বৈঠক করেন, তারপরে প্রায় এক ঘণ্টা আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন।
ভুটানকে ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য ঢাকার দৃষ্টিভঙ্গি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভূগোল এবং প্রকৃতি আমাদের একত্রিত করেছে। আমাদের লক্ষ্য একসঙ্গে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বলেন, ‘ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে উষ্ণ ও চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।’ তিনি বাংলাদেশকে ভুটানের ‘আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের’ উৎস হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘মধ্যযুগে বাংলাদেশি সন্ন্যাসীরা হিমালয় অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম নিয়ে গিয়েছিলেন।’
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের এই সফর এই অভিন্ন ভবিষ্যতের জন্য একটি বিল্ডিং ব্লক হবে।’ তিনি ভুটানকে বিশ্বের প্রথম কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী তোবগের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরেন।
উভয়পক্ষ দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ ও ভুটান এর আগে ২০২০ সালে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্পাদিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, ‘ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা প্রথম দেশ হিসেবে পরিণত হবে। এফটিএ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ভুটানে পণ্য চলাচল সহজতর করার বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুটানের কন্টেইনার ছাড় করার জন্য তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। দুই দেশ দ্বিমুখী পর্যটনের প্রসারে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনেও সম্মত হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়- একটি স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের বাণিজ্য সম্পর্কে। উভয় নেতা চুক্তি সই অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা আশা করে, এই রফতানি ভুটানের ডিজিটাল কানেক্টিভিটি জোরদার করবে এবং ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনবে।’
প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, ‘ভুটান একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি গড়ে তুলছে এবং ভুটানের কার্গো লোড ও আনলোডের জন্য নারায়ণগঞ্জে জায়গাসহ বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী তোবগে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ‘উচ্চ লক্ষ্য পূরণ’ এবং ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ নিশ্চিত করার জন্য অভিনন্দন জানান।
আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাইদুর রহমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যেব উপস্থিত ছিলেন।
সকাল নিউজ/এসএফ


