ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দেশীয় চলচ্চিত্রের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর থেকে সালমান শাহ’র মা সহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছেন, সালমানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেটিকে অপমৃত্যু মামলায় বারবার আত্মহত্যা বলেই দেখানো হয়েছে।
এই মৃত্যু রহস্যের জট খুলতে অবশেষে প্রায় ২৯ বছর পর ২০ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে গত ২১ অক্টোবর রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুম। ফলে দেশীয় চলচ্চিত্রের নন্দিত এ চিত্রনায়কের মৃত্যু রহস্য নতুন করে আলোচনায় আসে।
মামলার এজাহারে সালমান শাহ’র প্রাক্তন স্ত্রী সামিরা হক প্রথম আসামি এবং বন্ধু ডন, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও লতিফা হক লুসিসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। উল্লেখ করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের নাম। ফলে আত্মহত্যা নয়, হত্যা মামলা হিসেবেই শুরু হয়েছে তদন্ত। এরই মধ্যে অভিযুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ফারুক।
এখনো পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। বাদীপক্ষের অভিযোগ, সালমানকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা এ ঘটনাকে আত্মহত্যায় রূপ দিতে পুলিশের তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
একইভাবে বাদীপক্ষকে ঘাটে ঘাটে বাধা দেওয়া হয়েছে, যাতে মৃত্যুরহস্যের জট না খোলে। ১৯৯৭ সালে আসামি রেজভি আহমেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।’ কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তখন তা আমলে নেননি। এ ছাড়া সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার অভিযোগের বিপক্ষে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করা হলেও সেসব আমলে নেয়নি পুলিশ। মামলা গ্রহণের পর ২৯ বছর আগের সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন/ রমনা থানার তদন্ত কর্মকর্তা।
আসামিদের মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়া বাকি ১০ জনই দেশে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে হত্যা মামলা রুজু হওয়ার দুই দিন আগেও সামিরা হক একটি বিউটি পার্লার উদ্বোধন করেন। সালমানের বন্ধু ডনের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জবানবন্দি নেয়া আগের সাক্ষীদের ছাড়াও সন্দেহভাজন সবার বক্তব্য নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া চিত্রনায়িকা শাবনুরসহ চলচ্চিত্র জগতের বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তারা।
এমন পরিস্থিতিতে শুধু দেশের বিনোদন অঙ্গনেই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বস্তরে প্রিয় নায়কের মৃত্যুরহস্য নিয়ে চলছে নানান আলোচনা ও উৎকণ্ঠা। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী চিত্রনায়িকা শাবনূর সোমবার ‘আবারও সালমান শাহ প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।
এতে তিনি দাবি করেন, ‘একটা সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার ও সালমানের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হতো, এখনো তা চলমান রয়েছে।’ সবশেষে তিনি অকাল প্রয়াত সালমানের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। তার মতোই অসংখ্য সালমান শাহ ভক্ত-শুভাকাঙ্খিদের একই প্রত্যাশা।
সকাল নিউজ/এসএফ

