লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় দ্বিতীয় দিনের মত সারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। আজ রবিবার সকালে উপজেলার মেডিকেল মোড় গোল চত্বর এলাকায় সার বিক্রয় কেন্দ্র ‘মেসার্স ওয়াছেক খান’-এর সামনে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।
কৃষকরা জানান, লালমনিরহাটের ব্র্যান্ডিং পণ্য ভুট্টা চাষ। সেই ভুট্টা চাষাবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। জেলার সব চেয়ে বেশি ভুট্টার চাষাবাদ হয় হাতীবান্ধা উপজেলায়। ভুট্টা চাষের শুরুতেই সার সংকটের খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এ সার নিয়ে গেলো সপ্তাহে এ উপজেলার সিংগিমারী ইউনিয়নের কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ করে ডিলার ও উপ সহকারী কৃষিকর্মকর্তার অপসরন দাবি করেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলেও কৃষকরা কাঙ্খিত সার না পেয়ে দ্বিতীয় বারের মতো মহাসড়ক অবরোধ করেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে সিন্দুর্না ইউনিয়নের বিসিআইসি’র পরিবেশক মেসার্স ওয়াছেক খান সার ঘর থেকে সার বিক্রি করা হয়। কয়েক দিন ধরে কৃষকেরা সার পাচ্ছিলেন না। বিক্রয়কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে রবিবার সকালে সিন্দুর্না ইউনিয়নের চাষিদের নিকট সার বিক্রি করা হবে। এ প্রচারণা শুনে সিন্দুর্না ইউনিয়নের কৃষকেরা সকালে সেখানে ভিড় জমান। মুহুর্তে সার ক্রেতার দীর্ঘ লাইন হয় ওই বিক্রয় পয়েন্টে। কিন্তু কয়েকজন কৃষককে তাদের চাহিদামতো সার না দিয়ে হঠাৎ বিক্রয়কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, তানজিলা আক্তার ও গোবিন্দ কুমার সহযোগিতায় পরিবেশক সারগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সার বিক্রি করেন বলে অভিযোগ উঠে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে পরিবেশক ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অপসরন দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন। মহাসড়কে টায়ারে আগুন লাগিয়ে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা ও সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর ইসলাম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে ৩ ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পর্যাপ্ত সার সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিলে মহাসড়ক ছেড়ে দেন কৃষকরা।
চর সিন্দুর্না গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, জমির জন্য ইউরিয়া সার দরকার। কয়েক দিন ধরে ঘুরছি তারপরও সার পাইনি। আজ সকালে সার আসবে শুনে গিয়েছিলাম, কিন্তু সার না পেয়ে শুন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে। কৃষি অফিসের লোকদের সহযোগিতায় ডিলাররা বাহিরে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। সার না পেলে ভুট্টার আবাদ নষ্ট হবে।
অপর কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, সারের জন্য বারবার ডিলারের কাছে যাচ্ছি, তবু সার পাই না। খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে ডিলাররা। এই দুর্নীতি আর চলতে পারে না। ডিলার আর কৃষি কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই।
মেসার্স ওয়াছেক সার ঘরের স্বত্বাধিকারী মো. ওয়াছেক খান বলেন, কৃষি অফিসের লোকজনের উপস্থিতি ছাড়া সার বিক্রি করা হয় না। ছেলেরা আমার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আমি তেমন কিছু জানি না।
হাতীবান্ধা উপজেলা বীজ সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, ভুট্টার মৌসুম চলায় সকল কৃষক একই সঙ্গে সার কিনতে আসছেন। যার কারণে মজুদ কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কৃষকরা মজুদ না করে চাহিদা মতো সার কিনলে সমস্যা হতো না। আমরা কৃষক পর্যয়ে কমিটি করেছি। সেই কমিটিও কৃষকদের চাহিদা বিবেচনা করে কৃষি অফিসারদের সহায়তা করবেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহে চাহিদা কমে গেলে চাপটাও কমে যাবে।
সকাল নিউজ/এমএম

