বাংলাদেশ সবসময়ই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ মন্তব্য করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেছেন, দুর্যোগ মোকাবেলার চেয়ে প্রশমন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তৃতীয় ন্যাশনাল ডায়ালগ প্ল্যাটফর্ম অন অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর ভোলা ঘূর্ণিঝড়, পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণকালের অন্যতম এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। ভোলা ঘূর্ণিঝড় প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল এবং আমাদের জাতির স্মৃতিতে তৈরি করেছিল এক গভীর ক্ষত।
তিনি বলেন, তখন তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। এর ঠিক এক বছর পর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। সেই থেকে বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত বারবার বন্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, জীবিকা ধ্বংস, উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করাসহ দারিদ্র্য বিমোচনকে আরও কঠিন করেছে। বর্তমান জলবায়ু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, দুর্যোগ ঝুঁকিগুলো ক্রমেই বাড়ছে। আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস, বজ্রপাত, খরা, তাপপ্রবাহ ও শৈত্যপ্রবাহ আরও প্রবল এবং ঘনঘন ঘটছে। এগুলো শুধু আমাদের অর্থনীতিকে নয়, মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাপনকেও হুমকির মুখে ফেলছে।
উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সাল থেকে দুর্যোগ মোকাবেলার চেয়ে দুর্যোগ প্রশমন অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কেবল পূর্বাভাস নয় বরং পূর্বাভাসের ভিত্তিতে নেওয়া পদক্ষেপ উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, যার অর্থ সংকট আসার আগে কাজ করা, পরে নয়। এই মানসিকতাই আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভাবনায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই অগ্রগতি দেখছি। ‘আর্লি ওয়ার্নিং ফর অল’ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শেষ সীমারেখায় বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষ যেন সঠিক সময়ে, যথার্থ সতর্কবার্তা পান। প্রযুক্তির এই উন্নতি মানুষের কল্যাণে প্রয়োগযোগ্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
উপদেষ্টা বলেন, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিলে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবীরা অসাধারণ কাজ করতে সক্ষম হবেন। আমাদের লক্ষ্য একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী শক্তি তৈরি করা, যা যেকোনো সংকটে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকবে।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রোগ্রামের প্রধান জেসি উড, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ডাক্তার মো. আজিজুল ইসলাম, দুর্যোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমানসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসূত্র: বাসস।
সকাল নিউজ/এসএফ