জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের আলোচনায় বসেছে ঐকমত্য কমিশন।
আজ রোববার (৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে একাধিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রস্তাব দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।’
আজ মূলত সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য কতটা কমেছে, তা শুনতে চাইবে ঐকমত্য কমিশন। দলগুলো চাইলে বিশেষজ্ঞদের সুনির্দিষ্ট ও পরিমার্জিত পরামর্শগুলোও প্রস্তাব আকারে তুলে ধরবে কমিশন।
৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর। আজ আলোচনা শেষ করার কথা রয়েছে। তবে শেষ করতে না পারলে আর এক দিন আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চায় কমিশন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, এই ছয়টি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি এটাকে একটি জায়গায় আনা যায়। উপস্থিত ৩০টি রাজনৈতিক দল যদি একটি প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সানন্দে সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব। আমরা বলব, সেই একটি প্রস্তাব আছে, এটা বাস্তবায়নের পথ; এভাবে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিবেচনা করতে পারেন।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বরের আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছিল, সেগুলো বিশেষজ্ঞদের জানিয়েছেন বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। তিনি বলেন, তারই ভিত্তিতে তাঁরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের আগের অবস্থানকে ব্যাখ্যাও করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে একমত হওয়ার জায়গা তৈরি হলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে। দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব হবে।’ এসব বিষয় নিয়ে কমিশন সকালে প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বলেও জানান আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টা সব সময় এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াসহ বিশেষত সনদকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে সবার স্বাক্ষরিত রাজনৈতিক দলিলে পরিণত করা যায় কি না, সে বিষয়ে তাদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক ব্যস্ততা আছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে। আপনারা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন, সেগুলো যেন বাধাবিঘ্ন না হয়, সেটা আমরা করতে চাই। তা ছাড়া মেয়াদের দিক থেকে ১৫ অক্টোবরই মেয়াদ শেষ হবে। তারও আগে আমরা এটা শেষ করতে চাই।’
রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলগত বিবেচনার বাইরে গিয়ে সম্মিলিতভাবে কোনো প্রস্তাব দিতে পারে, সেটা নিয়ে কমিশন আলাপ–আলোচনা করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, তারই পটভূমিতে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যদি আজকে ৩০টি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় আসে, তাহলে আমরা আর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবই না। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসার, তাহলে সেটা আমরা বসব।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সকাল নিউজ/এসএফ