বর্তমানে চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩.৯৭ শতাংশ, বিনিয়োগে স্থবিরতার পাশাপাশি বেড়েছে দারিদ্রতাও। দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। একইসঙ্গে চরম দারিদ্র্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, খরচ বেড়ে যাওয়া এবং ঋণের উচ্চ সুদের কারণে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ কমে গেছে। ফলে বিনিয়োগ খাতেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ অব ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে ‘মান্থলি ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস জুন-জুলাই ২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠান আয়োজন করে পিআরআই।
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম পারভেজ চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দীন চৌধুরী, মেটো চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করিম প্রমুখ।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ খাতে ধীরগতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো, যন্ত্রপাতি আমদানি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে। একই সঙ্গে, নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধিও অনেকটা কমে গেছে- যেখানে এই খাতটি দেশের মোট বিনিয়োগের বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের শিল্প উৎপাদনের হার জুন মাসে কিছুটা বেড়েছে, তবে তা এখনো দুর্বল পর্যায়েই আছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত এবং খনিজ খাত প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করছে না। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ উৎপাদন জুলাই মাসে আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ কমে গেছে, যা অর্থনীতির সামগ্রিক ধীরগতির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়াচ্ছে। জুন মাসে এলএনজি আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে বিদ্যুৎ আমদানিও বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে।’
ড. আশিকুর রহমান বলেন, একটি আশার কথা হলো, জুলাই মাসে দেশের উৎপাদন সূচক ভালো করেছে। তৈরি পোশাক, নির্মাণ ও সেবাখাত কিছুটা গতি পেয়েছে। তবে বর্ষাকাল ও প্রাকৃতিক কারণে কৃষিখাতে এখনো ধীরগতি রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পিপিআরসি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। একইসঙ্গে চরম দারিদ্র্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সকাল নিউজ/এসএফ