মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বাউলশিল্পী আবুল সরকার মহারাজকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ২৫৮ নাগরিক। একইসঙ্গে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল রবিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের সই করা এক যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী যেন ইসলাম ধর্মের ‘সোল-এজেন্ট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দেশব্যাপী শুদ্ধি-অভিযানে নেমেছে। দুই শতাধিক মাজার ভাঙা, অসংখ্য ব্যক্তিকে মুরতাদ-কাফের-শাতিম ঘোষণা, কবর থেকে তুলে লাশ পোড়ানো, রাস্তার জটাধারী বাউল-ফকিরদের ধরে ধরে চুল কেটে দেওয়া, নারীদের চলাচল ও পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা, নাচ, গান-নাটকের অনুষ্ঠান এমনকি খেলাধুলা ও মেলার মতো আয়োজন পÐ করার মধ্য দিয়ে ভিন্নমত ও ভিন্ন-আচারের মানুষদের নির্মূল করাই যেন তাদের লক্ষ্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সমাজের সর্বত্র সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন, মতপ্রকাশ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভ‚তি, পালাপার্বণ, আধ্যাত্মিক সাধনা ও বিনোদনকে বাধাগ্রস্ত করে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করতে তারা উন্মত্ত হয়ে উঠেছে এবং এসব ক্ষেত্রে বারবার ‘ধর্মীয় অবমাননা’র অভিযোগ তোলার অস্ত্রটিই ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ জুলাই-আন্দোলনের মূল স্পিরিট ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠন—অন্তবর্তীকালীন সরকারের অঙ্গীকারেও যে অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেখা গেল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা মব-সন্ত্রাস বা দঙ্গলবাজী বন্ধে কোনো কার্যকর ভ‚মিকা তো গ্রহণ করছেনই না; বরং তারা শুরু থেকেই নীরবতা অবলম্বনের মাধ্যমে একে প্রশ্রয় দেওয়া, এমনকি ‘প্রেশারগ্রæপ’ ইত্যাদি নাম দিয়ে ঘটনাকে হালকা করার চেষ্টা করছেন এবং ভুক্তভোগী বা হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিদেরই ভুয়া মামলায় আটক করছেন। এরই ধারাবাহিকতার সা¤প্রতিকতম উদাহরণ বাউল আবুল সরকার মহারাজ। আমরা এই গ্রেফতার-ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে আমরা যারা নানা মত-পথের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে নানাভাবে ও নানা মাধ্যমে ভ‚মিকা রেখেছি এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে সই করেছেন- অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক আব্দুস সেলিম, অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ, অধ্যাপক আজফার হোসেন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক মজিবুর রহমান, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, লেখক ও অধ্যাপক আ-আল মামুন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী মীরু খান, অধ্যাপক খালেদ হোসাইন, সামিনা লুৎফা, শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, কথা সাহিত্যিক পাপড়ি রহমান, শিক্ষক সায়মা আলম, শিক্ষক মুনমুন নেসাসহ ২৫৮ নাগরিক।

