হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের বিপরীত সড়কের পাশে ড্রাম থেকে বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের (২৬) টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্য। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, আশরাফুলকে হত্যার পর লাশের সঙ্গে একই বাসায় অন্তত ‘২৪ ঘণ্টার বেশি’ লাশ কী করবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা করেন জারেজুল ইসলাম ও শামীমা।
একপর্যায়ে দুজনে সিদ্ধান্ত নেন, লাশ টুকরো করে ড্রামের মধ্যে নিয়ে কোথাও ফেলে দিয়ে আসবেন। এমনভাবে কাজটি করবেন যেন কেউ বুঝতে না পারে। সে অনুযায়ী দা দিয়ে লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে হাইকোর্টের সামনে ফেলে যায়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসামি জারেজুল ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটি জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ডিবির একটি সূত্র।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে বন্ধু আশরাফুল হত্যায় জড়িত জারেজুলকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জারেজুলকে ডিবি কার্যালয় আনা হয়েছে।’
অন্যদিকে র্যাব-৩ জানায়, ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে হত্যা মামলায় জারেজুলের প্রেমিকা শামীমা বিভিন্ন আলামতসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
জানা যায়, নিহত ব্যবসায়ী আশরাফুল এবং মালায়েশিয়া প্রবাসী জারেজুল বাল্যবন্ধু। তাদের বাড়ি একই এলাকায়, রংপুরে। বছর তিনেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার এক প্রবাসীর স্ত্রী শামীমার সঙ্গে জারেজুলের পরিচয় হয়। শামীমা দুই সন্তান নিয়ে কুমিল্লায় বাস করেন। এক পর্যায়ে জারেজুল ও শামীমা বিবাহিবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান।
জারেজুল মাঝে মধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসতেন এবং শামীমার সঙ্গে দেখা করতেন। এই সম্পর্কের কথা জারেজুল তার বন্ধু আশরাফুলকে জানিয়েছিলেন। একসময় জারেজুলের কাছ থেকে আশরাফুল শামীমার ফোন নম্বর নেন। তিনিও শামীমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে দুজনের সম্পর্ক হয়।
ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৩ অক্টোবর জারেজুল মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসে রাজধানীর দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। ওই বাসায় শামীমাকে নিয়ে ওঠেন। জারেজুলের সঙ্গে ওই বাসায় আসেন আশরাফুল। তখন জারেজুল জানতে পারেন, শামীমার সঙ্গে আশরাফুল সম্পর্কে জড়িয়েছেন।
এ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়।
এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকালের মধ্যে ওই বাসায় আশরাফুলকে হত্যা করা হয়। লাশ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ছিলেন জারেজুল ও শামীমা। এ সময় বাইরে থেকে জারেজুল খাবার কিনে নিয়ে আসতেন, তারপর তিনি ও শামীমা খেতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে লাশ বাথরুমে নিয়ে ২৬ টুকরো করেন জারেজুল ও শামীমা। এরপর লাশের টুকরো দুটি ড্রামের ভেতর রাখা হয়। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওই ড্রাম নিয়ে তারা রাজধানীতে ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে হাইকোর্টের সামনে সেটি ফেলে যান।
সকাল নিউজ/এসএফ

