‘২০ পার্সেন্ট বাড়ি ভাড়া, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, দিতে হবে দিয়ে দাও’সহ নানা স্লোগানে মুখরিত রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, শহীদ মিনারে ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এতে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো আজ সোমবার শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত কাটানোর পর সকাল থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ঢাকায় অবস্থান করা শিক্ষকরা। তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।এতে শত শত শিক্ষক-কর্মচারী অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সকাল থেকেই ক্লাস নেননি অনেক শিক্ষক। তারা প্রতিষ্ঠানে হাজির হলেও ক্লাসসহ অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বিরত আছেন। আর শিক্ষক একটি অংশ ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা আজও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
হামলার বিচারসহ তিন দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আমাদের শিক্ষকরা হামলার শিকার হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারি না। আমাদের দাবি যৌক্তিক। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
রাজধানীর এমপিওভুক্ত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে ক্লাস পরীক্ষা। তবে শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন। সীমাহীন কষ্ট ও দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে খোলা আকাশের নিচে রাত পার করেছেন। এত কিছুর পর শিক্ষকরা আর খালি হাতে ঘরে ফিরতে চান না।
প্রজ্ঞাপন আদায় করে নিয়েই শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন জানিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘তিন দফা দাবি পূরণের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের কোনো পক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছি, দাবি পূরণে মন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে।’
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর একটি মাদ্রাসার আন্দোলনরত শিক্ষক ইউসুফ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা এখানে যাঁরা আছি, তাঁদের রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। শুধু ন্যায্য অধিকার আদায়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি।’ তিনি জানান, তাঁর এলাকায় অন্তত ৯০% শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।’
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা এখানে যাঁরা আছি, তাঁদের রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। শুধু ন্যায্য অধিকার আদায়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি।’ তিনি জানান, তাঁর এলাকায় অন্তত ৯০% শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।’
আন্দোলনরত শিক্ষক কর্মচারীরা জানান, চলমান কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হবে, তা পূরণে প্রয়োজনে তারা পরবর্তীতে শুক্র ও শনিবার ক্লাসে নেবেন। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মস্থলে ফিরবেন না।
উল্লেখ্য, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর ব্যানারে গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন শিক্ষক কর্মচারীরা। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। এতে ওই সড়কে প্রায় ছয় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ছুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গতকাল বেলা তিনটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেখানে তারা রাতে অবস্থান করেন। আজ সকালেও দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।
সকাল নিউজ/এসএফ