সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০ টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
অকুতোভয় এ জুলাই যোদ্ধার অকাল প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস, বিএনপি, জামায়েতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, নানা অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদির এই অকাল মৃত্যুতে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। তার প্রয়ান দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবারের সদস্যরা, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা জানান, হাদির পরিবারের দায়িত্ব নিবে সরকার। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এই রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। এ ছাড়া শুক্রবার দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
হাদির অকাল প্রয়াণে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদির অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে দেশ এক সাহসী কণ্ঠস্বরকে হারাল।’ প্রধান বিচারপতি হাদির রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শোকবার্তায় তারেক রহমান মরহুম শরিফ ওসমান হাদির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং এই দুঃসময়ে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। পাশাপাশি তিনি পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ও শক্তি দান করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।
একইভাবে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। এক বিবৃতিতে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘ওসমান হাদি মানবিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। ন্যায়, সত্য ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার শাহাদাতে জাতি একজন নির্ভীক কণ্ঠস্বর ও আদর্শবাদী যোদ্ধাকে হারাল।’
হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
এক শোকবার্তায় জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা বলেন, ‘ওসমান হাদি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক ও সাহসী যুবক। নিজ আদর্শে অবিচল থেকে তিনি আজীবন অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। সন্ত্রাসী হামলায় তার এ নির্মম মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা বলেন, ‘যারা ওসমান হাদিকে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ। রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বিপ্লবী ওসমান হাদিকে মহান আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করুন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার সাহসিকতা থেকে তরুণদের অনুপ্রাণিত হওয়ার তাওফিক দান করুন।’
হাদির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তার মৃত্যুর পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ শোক বার্তা জানান এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন।
এতে বলা হয়, আমাদের এই সহযোদ্ধার অকালপ্রয়াণে এনসিপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
এদিকে ওসমান হাদীির মৃত্যুতে টিএসসিতে শোক মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন তারা। তারপর সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানান ডাকসুর নেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পোনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার আগে গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকার কালভার্ট রোডে নির্বাচনী প্রচারণাকালে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) হাদির মরদেহ নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে রওনা করে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সকাল নিউজ/এসএফ

