প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় মেহেরপুরে জেমসের কনসার্ট স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর ‘সূর্য ক্লাব’ নামের একটি ক্লাবের উদ্বোধন উপলক্ষে তারা এ কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল।
অনুমতি না মেলায় কনসার্ট স্থগিতের বিষয়টি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নিশ্চিত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে জানায়, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কনসার্টের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এদিকে জেমসের কনসার্ট স্থগিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা সৃষ্টি হয়। নেপথ্যে অজানা মুরব্বিদের ইন্ধনের কথা চাউর হয়েছে। তারা কারা মুবব্বি বিষয়টি কেউ পরিষ্কার করতে পারেননি।
কনসার্টের আয়োজক ‘সূর্য ক্লাব’-এর সভাপতি নাহিদ মাহবুব সানী এবং সাধারণ সম্পাদক নাসিম রানা বাঁধন জানান, রাজনৈতিক চাপে মুরব্বিদের খুশি করতে না পারায় জেমসের কনসার্টের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।
তবে মুরব্বি কারা সে বিষয়ে স্পষ্ট না বললেই তাদের ধারণা, মেহেরপুর জেলা বিএনপির একটি অংশ, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর আপত্তি থাকায় জেমসের কনসার্ট সম্মতি দিচ্ছে না প্রশাসন।
তবে সূর্য ক্লাব’ -এর ক্লাবের সভাপতি নাহিদ মাহবুব সানী বলেন, ‘কনসার্ট-এর অনুমতি না দেওয়ায় এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য আমরা পূজার পর হাইকোর্টে রিট করব।’
সাধারণ সম্পাদক নাসিম রানা বাঁধন জানান, তারা জেমসের কনসার্টের অনুমতি চেয়ে ১০ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর ডিসি মহোদয়ের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তখন ডিসি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। মেহেরপুর সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই। আপনাদের অনুষ্ঠানটি যদি পুলিশ প্রশাসন থ্রেট মনে না করে তাহলে কোনো আপত্তি নেই।’ তার থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর তারা মেহেরপুরের ওসি, এসপি, সার্কেল এসপি মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেন। তিনিও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘এসপি মহোদয় জানিয়েছেন, এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। তিনি তার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। -সেই আশ্বাসের ভিত্তিতেই আমরা কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু প্রচারণা চলাকালীন একদিন ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় আমাদের প্রচার মাইকের অটোচালককে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হন। লোকটা হাত-পা ধরে বেঁচে ফেরে। এ ঘটনা শোনার পর আমরাও প্রচারকার্য স্থগিত করি। কিন্তু আবেদনের ১৫ দিন কেটে গেলেও প্রশাসন থেকে হ্যাঁ বা না কিছু জানাচ্ছিল না।’
জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা স্টেডিয়ামকে জেমসের কনসার্টের ভেন্যু হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভেন্যুকে কেন্দ্র করেই কনসার্টের বিরোধিতা শুরু। ফলে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে গোভীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠকে চিন্তা করেন আয়োজকরা। এমনকি আমরা গোভীপুর মাঠ দেখতে যাওয়ার সময় সদর থানার ওসিও আমাদের সাথে ছিলেন।
প্রশাসনের আচরণ তুলে ধরে বাঁধন বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বরের পর আমরা এসপি মহোদয়ের কাছে গেলে তিনি বলেন, এখনকার বাতাসটা একটু অন্য রকম। আমি যেহেতু এখানে নতুন তাই বুঝতে পারছি না। তোমরা একটু ম্যানেজ করো। আমরা কাকে ম্যানেজ করব জানতে চাইলে তিনি আবার বলেন যে তোমরা ম্যানেজ করো। এডিসি মহোদয় বলেন, তোমরা কি তোমাদের মুবব্বিদের খুশি করতে পারোনি? কোন মুবব্বিদের খুশি করতে হবে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। বলেন, ব্যাপারটি আমার হাতে নেই। এটি ডিসি স্যার ও এসপি মহোদয়ের ওপর নির্ভর করছে।’
বাঁধন সবশেষ বলেন, ‘কে বা কারা যে এটা বন্ধ করল, তা আমরা এখনো বুঝতে পারিনি। ফলে এককভাবে কাউকেই দায়ি করতে পারছি না। আমরা যা বলেছি সব অনুমাননির্ভর বলেছি।’
এ বিষয়ে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মোহাম্মদ আব্দুল ছালাম বলেন, ‘জেমসের কনসার্টকে ঘিরে অনেক লোকসমাগম হবে, যার ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, কোর কমিটির সিদ্ধান্ত এবং গোয়েন্দা সংস্থার অনাপত্তি না থাকায় কনসার্ট অনুমোদন দেওয়া গেল না।’
সকাল নিউজ/এসএফ