সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৪২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১২ জনে এবং শনাক্ত রোগী বেড়ে ৪৯ হাজার ৯০৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
আজ রোববার (৫ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে তার মধ্যে ছয়জনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকার হাসপাতালগুলোতে। বাকি দুইজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে।
তাদের মধ্যে চারজন মারা গেছে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাকি তিনজন মারা গেছেন ডিএনসিসি কোভিড–১৯ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কক্সবাজারের ২৫০ শয্যার হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজার ৪২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৭১৭ জন পুরুষ এবং ৩২৫ জন নারী। একই সময়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮৩ জন রোগী। চলতি বছর এর আগে ২৪ ঘণ্টায় এত রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়নি।
এমতাবস্থায় চলতি অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠতে পারে বলে অশংকা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। এ মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে আজ রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত) নয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
আর এ সময় একদিনে চলতি বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যায় রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নয়জনের মৃত্যু হয়েছিল। এটি ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু। আজ আবার নয়জন মারা গেল।
জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে–নজীর আহমদ এ বিষয়ে বলেন, ‘এভাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আর সরকার নিষ্ক্রিয় দর্শক হিসেবে তা দেখছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সর্বোপরি সরকারের কাছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু যেন কাঙ্ক্ষিত হয়ে গেছে। তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। যদি দিনের পর দিন এভাবে মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়তে থাকে তবে তা সরকারের নিষ্ক্রিয়তাই প্রমাণ করে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সরকার গতকানুগতিক পন্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে বলেই অবস্থা এত নাজুক হয়ে পড়েছে। তারা ভেবেছিল, এভাবেই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বাস্তবে যে তা হয় না এটা প্রমাণ মিলছে। ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ঢাকার বাইরে বেশি। এদিকে সমস্ত নজর ঢাকার দিকে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকেন্দ্রিকরণ ছাড়া পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না।’
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২২ জন ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার দুই সিটির হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫০ জন। ঢাকার দুই সিটির বাইরে বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে বরিশাল বিভাগে। এ বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হয়েছে ১৯৫ জন। এর মধ্যে বরগুনার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৬৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সভিত্তিক রোগী ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
দেশে ২০০০ সালে যখন নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয় তখন তা ছিল মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক রোগ। কিন্তু দিন দিন এটা ছড়িয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গত বছর থেকেই ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ছড়িয়েছে ব্যাপকহারে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ৪৭৮ জন। আর ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৪২৯ জন।
জনস্বাস্থ্যবিদ বে–নজীর আহমদ বলছিলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখানে বিশেষ করে মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ আছে। তাদের অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু দেশের অন্যত্র এটা প্রায় অনুপস্থিত। ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে পৌরসভাগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় কোনো উদ্যোগই নেই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার সত্যিই খুব ভীতিকর।
সকাল নিউজ/এসএফ