বেশ কিছুদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণের ফলে এবং উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে অতিভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে নদনদীর পানি। উচ্চমাত্রার এ পানিপ্রবাহ থেকে ফলে ধেয়ে আসা ঢলে প্লাবিত হতে পারে দেশের ১২ টি জেলার নিম্নাঞ্চল। এমন পূর্বাভাসই দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পাউবো জানিয়েছে, সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে এবং উজানে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার ও ত্রিপুরা প্রদেশে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির স্তর আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। এতে তিস্তা ও দুধকুমার নদীসমূহ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে। এ ছাড়া সুরমা, কুশিয়ারা ও সারিগোয়াইন নদীসমূহের পানির সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
এ সময় সাময়িকভাবে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, মুহুরী ও ফেনী নদীসমূহের পানির সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। এ সময় মুহুরী, সিলোনিয়া, ফেনী ও হালদা নদীসমূহ সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। ফলে ধেয়ে আসা ঢলে ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে সাময়িকভাবে।
এ ছাড়া আবহাওয়া অফিস আভাস দিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাবে ঢাকাসহ ছয়টি বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জের নিকলিতে সর্বোচ্চ ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
একই সময়ে ঢাকায় ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এক বিশেষ সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরের ৭২ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে।
সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমানে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগে এবং এর উজান ভারতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে করে রংপুর বিভাগের তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। সেই সঙ্গে নদী সংলগ্ননিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচর প্লাবিত হতে পারে।
সকাল নিউজের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদসহ সবকটি নদনদীর পানি দ্রুত বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি। পানির এই বেগ বাড়তে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে পাশ্ববর্তী বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হবে।
সকাল নিউজ/এসএফ