দেশ থেকে যেসব কোম্পানি বিদেশে টাকা পাচার করেছে তারা সরকারের চেয়েও স্মার্ট মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘তারা স্মার্ট বলেই বিদেশে এত টাকা পাচার করতে পেরেছে। কোম্পানিগুলোতে যে কত কিছু তেলেসমাতি হয়! আমি তো মাঝে মাঝে টের পাই, কী হচ্ছে, আর কী হচ্ছে না।’
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ইআরএফ ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম উদ্বোধন এবং ‘কর্পোরেট খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকরা হচ্ছেন সামাজিক অডিটর। অডিটররা তৃতীয় চোখ, আর আপনারা চতুর্থ চোখ। আপনারা দেখবেন। এটা খুবই দরকার। আপনারা অডিটরদের অডিট করবেন। অডিটররা যে সব তথ্য আনতে পারছে বা দিচ্ছে, তা-ও সব নয়। এ ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টি থাকা জরুরি। আপনারাই হচ্ছেন সেই অন্তর্দৃষ্টি।’
কোম্পানিগুলোর বিদেশে টাকা পাচার প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চেয়েও তারা স্মার্ট। টাকা তো এমনি পাঠায় না, লেয়ারিং করে পাঠায়। প্রথমে টাকা যাবে কেরানীগঞ্জে, তারপরে গাজীপুরে, সেখান থেকে রংপুরে এবং শেষ পর্যন্ত সিলেটে।’
সাংবাদিকদের তথ্য ও সংখ্যার পেছনে থাকা অন্তর্নিহিত দিক তুলে আনার পরামর্শ দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সংখ্যার পেছনেও বিশেষত্ব আছে। শুধু তথ্য ও সংখ্যা হুবহু লিখলেই হয় না, সেগুলোর বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে।’
বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক কথা বলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে একটু ইতিবাচক কথাবার্তা বলুন। গতকাল একজন ভদ্রলোক টিভিতে সরকারের বিষয়ে নেতিবাচক অনেক কথা বলেছেন। বলেছেন কিছুই হয়নি, বাজে একটি অন্তর্বর্তী সরকার, অথর্ব সরকার-এভাবে সমালোচনা করেছেন। তারপর আবার বলেছেন, এগুলো কিছু লোকের বয়ান, যা ফ্যাসিস্টকে সহায়তা করছে। প্রথমে সরকারকে সমালোচনা করে শেষে বললেন এ সরকার টাকা-পয়সা মারে নাই, বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়েছে।’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যে সবকিছু ভালো করছি তা নয়, ইতিবাচক-নেতিবাচক মিলিয়েই আছে। বিদেশে কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত ভালো। বিভিন্ন বহুজাতিক দাতাসংস্থার সঙ্গে আমার কথা হয়, তারা সীমিত সময়ে আমাদের যতটুকু সাফল্য অর্জন করেছি, তার প্রশংসা করেছে। ভবিষ্যতে যাতে বাংলাদেশের সামনে কোনো বাধা না আসে, দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে, সেটি আপনাদের দেখতে হবে।’
সেমিনার শেষে ইআরএফ ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অর্থ উপদেষ্টা। ইআরএফ ইনস্টিটিউট একাডেমির কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হয়, সংগঠনটি প্রথমে স্বল্পমেয়াদী কোর্স পরিচালনা করবে। যারা অর্থনীতি বিটে সাংবাদিকতা করেন বা করতে ইচ্ছুক, কিন্তু ইআরএফের সদস্য নন, তারাও এ ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকতায় আগ্রহী তারাও অংশ নিতে পারবেন। স্বল্পমেয়াদী কোর্সের মেয়াদ হবে এক, দুই বা তিন দিন। আগামী অক্টোবর থেকে এ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হবে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ইআরএফ ও আইসিএবির মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। ইআরএফের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম এবং আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বসু স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বাংলাদেশের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি এন. কে. এ. মবিন এবং আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বসু।
সকাল নিউজ/এসএফ