নাম তার সাজু মিয়া। পেশায় দিনমজুর। আর্থিক অনটন সত্ত্বেও স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্রসন্তানকে নিয়ে সুখেই চলছিল তার সংসার। কিন্তু হঠাৎ একদিন বিনা মেঘে নেমে এলো বজ্রপাত। মাসখানেক আগের কথা। তার একমাত্র পুত্র ৮ বছর বয়সী আনিছুর সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল। হঠাৎ তার চোখে এসে মারাত্মক আঘাত করে বলটি। আঘাতে তার দুচোখের দৃষ্টি হারানোর শঙ্কা দেখা দেয়।
সাজু মিয়ার বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের হাজরানীয়া গ্রামে। প্রাথমিক অবস্থায় সন্তানকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন তিনি। ডাক্তার কিছুদিন চেষ্টা করার পর বলেন, আপনারা উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীকালে স্থানীয় লোকদের পরামর্শে আনিছুরকে রংপুর মরিয়ম চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্মরত চিকিৎসক বলেন, আপনারা আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যান।
কিন্তু দিনমজুর সাজু মিয়া এতো টাকা কোথায় পাবেন?
মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে। সাজু মিয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই হলো।
আনিছুরের এ দূর্দশার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বরাতে দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর ওর দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন শিহাব গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি শিহাব আহমেদ।
প্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি আনিছুরের খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসা শুরু করতে ওর বাবার হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন। এই তরুণ উদ্যোক্তা আনিছুরের স্থায়ী চিকিৎসায় সহায়তা করারও প্রতিশ্রুতি দেন।
সর্বশেষ, উন্নত চিকিৎসার জন্য আনিছুরকে গতকাল ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী মানবিক এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ সহায়তা শিশুটির জীবনে নতুন আলো জ্বালাবে বলে আশা করছি। তারা আরও বলেন, শিহাব আহমেদ সবসময়ই মানুষের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ান। এলাকার গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি এবং বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি বিস্তর কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার মানুষের সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে তিনি হাজার হাজার টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করেছেন। মসজিদ মাদ্রাসায় অজুখানারও ব্যবস্থা করেন তিনি।
চর ভোটমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিছুর। ওর স্বপ্ন, লেখাপড়া করে বড় হয়ে সিআইডি অফিসার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় একটি দুর্ঘটনা। শিহাব আহমেদ এবং তার মতো মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষের সহায়তায় শিশু আনিছুর ওর পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে, ওর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা আনিছুরের মা-বাবার। তারা বলেন, আমাদের একমাত্র পুত্র আনিছুর। আমরা চাইনা আমাদের ছেলে এই অল্প বয়সে পৃথিবীর আলো থেকে বন্ঞ্চিত হোক। শিহাব আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, বলতে বলতে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন সাজু মিয়া।