শেখ হাসিনা সরকারের আমলের তুলনায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল শুধু ছোটই নয়, আরও লক্ষ্যনির্ভর, পরিশ্রমী ও ফলপ্রসূ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে সাম্প্রতিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) দেওয়া বিবৃতির বিপরীতে সরকারের অভিমত তুলে ধরেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘টিআইবি ভুলভাবে দাবি করেছে যে এবারের প্রতিনিধি দলের সংখ্যা শতাধিক। তবে প্রকৃত সংখ্যা হচ্ছে ৬২, যা গত বছরের ৫৭ জনের চেয়ে সামান্য বেশি। এটি লক্ষণীয় যে, গত বছর সরকারের প্রতিনিধি দলে কোনও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন না।’
টিআইবি দাবি করেছে- প্রতিনিধিদলের সদস্য সংখ্যা ১০০-এর বেশি। তবে সরকারের তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটা ৬২, যা গত বছরের ৫৭ জনের তুলনায় সামান্য বেশি। গত বছর প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ভ্রমণ করা ছয়জন বিশিষ্ট রাজনীতিককে ওই তালিকায় ধরা হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
পোস্টে শফিকুল আলম জানান, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিআইবি একটি সম্মানিত সিভিল সোসাইটি সংগঠন ও স্বচ্ছতার দীর্ঘদিনের প্রবক্তা। তাই তারা যাচাই করা তথ্যের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত যাচাইবিহীন পোস্টের ওপর ভিত্তি করে বিবৃতি দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্য হলো- বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থরক্ষা ও দেশের অবস্থান তুলে ধরা। গত পাঁচদিনে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তত ডজনখানেক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন, যার মধ্যে ছয়টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক রয়েছে।
এ বছর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নিরাপত্তাকর্মী, যারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পক্ষ থেকে বিশ্বাসযোগ্য হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবু নিরাপত্তাকর্মীদের অনেকে দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করছেন।
সরকার বলেছে, প্রতিনিধিদলের আকার নিয়ে প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে এ বছরের সাধারণ অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানকে ভুলভাবে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা ও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় কূটনীতি এখন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
সরকারের বক্তব্যে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য ছড়াতে ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের বিরুদ্ধে লবিংয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে- যা কিছু আন্তর্জাতিক পক্ষের নীরব সমর্থনও পাচ্ছে।
এ বছরের প্রতিনিধিদলে কয়েকজন রয়েছেন যারা ৩০ সেপ্টেম্বরের রোহিঙ্গা সম্মেলনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন, যা আঞ্চলিক মানবিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ঢাকার নেতৃত্বের প্রমাণ বহন করে। এছাড়া কিছু উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিদলে না থাকলেও পৃথকভাবে ভ্রমণ করে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদেরও এ সফরে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তাদের সহায়তার জন্য কিছু কর্মকর্তা নিয়োজিত করা হয়েছে। সরকার বলছে, এ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।
সকাল নিউজ/এসএফ

