এতো সহজ সম্ভাবনা ভাগ্যের কড়া নাড়ে কালেভাদ্রে। আর সেই সহজকেই কঠিন করে তোলে আমাদের ক্রিকেটাররা। কোটি কোটি মনে বেদনা জাগিয়ে স্বপ্নকে কবর দেয়।
এমনটি অবশ্য নতুন নয়; তবে ক্রিকেটের ইতিহাসে এতোটা পথ পাড়ি দিয়েও যে, এখনো নিজেদের সক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারেনি এমনকি ক্রিকেটপ্রেমীদের নূন্যতম আস্থায় আসেনি সেটিই চরম হতাশার। বিশেষ করে ব্যাটারদের যাচ্ছেতাই পারফর্মেন্স, উদাসীনতা এবং আত্মবিশ্বাসহীন খেলা অশাহত করছে ক্রিকেট ভক্ত-অনুরাগীদের।
১১ রানে হেরে এশিয়া কাপের স্বপ্ন ভেঙে গেল বাংলাদেশের। অথচ, ম্যাচের সমীকরণটা ছিল খুবই সহজ। ২০১৬ এশিয়া কাপের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৩৬ রান। এর চেয়ে ঢের বেশি রান এই এশিয়া কাপে এই মাঠেই তাড়া করেছে লিটনরা।
সেটার সপ্তাহও পেরোয়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৯ রান তাড়া করে পাওয়া ওই জয়ই বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখার সাহসটা দিয়েছিল। তবে এবার ১৩৬ রান তাড়া করতে না পারার গ্লানি ভেঙে দিল সে স্বপ্নটা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতের ম্যাচটি ছিল অলিখিত ‘সেমিফাইনাল’। এই ম্যাচের জয়ী দলই এশিয়া কাপের ফাইনালে হবে ভারতের প্রতিপক্ষ। এমন ম্যাচে প্রথমে বোলারদের দারুন বোলিংয়ের পরও বাজে ফিল্ডিংয়ের কল্যাণে ১৩৫ রানে থামে পাকিস্তান। টাইগারদের বিবর্ণ ব্যাটিংয়ে এই রানই পাকিস্তানের জন্য ছিল যথেষ্ঠ।
১১ রানে ম্যাচ জিতে ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হয় পাকিস্তান। ২০ ওভারে টাইগাররা ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১২৪ রান। ব্যাট হাতে ব্যর্থ টাইগার টপ অর্ডার। ওপেনার সাইফ হাসান ১৫ বলে ১৮ রান করলেও পারভেজ ইমন ফিরেন শূন্য হাতে। আর তাওহিদ করেন ১০ বলে ৫ রান।
এই ম্যাচে একটু ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি শেখ মেহেদি। ১ ছক্কায় ১০ বলে ১১ রান করে ফিরেন তিনি। আর তাতেই ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে বাংলাদেশ।
এরপর ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন প্রথম বলে ছক্কা হাকানো নুরুল হাসান সোহান। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন শামীম হোসেন। হঠাৎই ছন্দপতন। ২১ বল খেলে যখন থিতু হয়েছেন তখনই সাইম আইয়ুবের বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন নুরুল হাসান। এই সময় তার রান মাত্র ১৬। এরপর মাঠে এসে ৯ বল খেলে মাত্র ৫ রান করে ফিরেন অধিনায়ক জাকের আলী।
পাকিস্তানের পক্ষে ৩ উইকেট করে নেন শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফ। সাইম আইয়ুব ২টি আর মোহাম্মদ নেওয়াজ নেন ১ টি উইকেট।
বৃহস্পতিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান জাকের আলী অনিক। ইনিংসের চতুর্থ বলেই পেসার তাসকিনের বলে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা রিশাদ হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই পাক ওপেনার শাহিবজাদা।
দ্বিতীয় ওভারে ক্রিজে আসা সাইম আয়ুবকে সাজঘরে ফেরান শেখ মেহেদী। তিন বলে খেলে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন এই পাক ব্যাটার। এরপর ক্রিজে আসা অধিনায়ক সালমান আগাকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ফখর জামান।
তবে রিশাদের জোড়া আঘাতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান। ২০ বলে ১৩ করে ফখর ও ৭ বলে ৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যান হুসেন তালাত। এরপর দলীয় ৪৯ রানে ২৩ বলে ১৯ রান করা অধিনায়ক সালমান আগাকে সাজঘরে ফেরান টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। সালমানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসা শাহীন আফ্রিদি রিশাদ হোসেনের করা ১২তম ওভারে ৩ টা সুযোগ পান। প্রথম বলে এক্সট্রা কাভারে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি নুরুল হাসান।
পরের বলে পাকিস্তান ব্যাটসম্যান বেঁচেছেন আম্পায়ার্স কলের কারণে। আর পঞ্চম বলে আকাশে তুলেও মেহেদী হাসানের ব্যর্থতায় বেঁচে গেছেন আফ্রিদি। ১ রানে প্রথম দুবার বেঁচে যাওয়া আফ্রিদি তৃতীয়বার বেঁচেছেন ২ রানে। অবশেষে আউট হওয়ার আগে ২ ছক্কায় ১৩ বলে ১৯ রান করেন তিনি।
৭১ রানে ৬ উইকেট তুলে নেওয়া বাংলাদেশ ওই ওভারে সুযোগ হারিয়েছে আরেকটি উইকেট নেওয়ার। ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ নেওয়াজের তোলা সহজ ক্যাচটি তো নিতেই পারেননি পারভেজ হোসেন, উল্টো বানিয়ে দিয়েছেন চার। ০ রানে আউট হতে পারত নেওয়াজ। কিন্তু টাইগার ফিল্ডারের আশির্বাদে ২ ছক্কা ১ চারে ১৫ বলে ২৫ রান করেন তিনি। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করতে থাকেন মোহাম্মদ হারিস। তবে দলীয় ১০৯ রানে ২৩ বলে ৩১ রান করে সাজঘরে ফিরে যান হারিস।
এরপর আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা নেওয়াজকে থামান তাসকিন। তাকে ফিরিয়ে নিজেদের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন এই টাইগার পেসার। শেষ দিকে ফাহিম আশরাফের ছোট্ট ক্যামিওতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান।
সকাল নিউজ/এসএফ