বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে বরফখণ্ড বিলীন হওয়ার হার। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী বরফখণ্ডটি থেকে এরই মধ্যে ৪০০ বর্গকিমি অংশ আলাদা হয়ে গেছে।
প্রায় ৪০ বছর আগে অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় বরফখণ্ড ‘এটুয়েন্টিথ্রিএ’/A23a উষ্ণ সমুদ্রজলের আঘাতে এখন ভেঙে পড়ছে। এটিই এ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী ও আকারে বৃহত্তম বরফখণ্ড।
১৯৮৬ সালে বরফখন্ড অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও এতোদিন প্রায় অক্ষতই ছিল। তবে চলতি মাসে সমুদ্রের উষ্ণ জলের কারণে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে এটি।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজার্স বলেন, এটি ‘ভেতর থেকে ক্ষয়ে যাচ্ছে… পানি এতটাই উষ্ণ যে, এটি আর টিকে থাকতে পারছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘অধিকাংশ বরফখণ্ড এতদিন টিকে থাকে না। এটি এত বড় ছিল বলেই এতদিন টিকে ছিল।’
এক সময় বরফখণ্ডটি আকারে ছিল গ্রেটার লন্ডনের দ্বিগুণ, এবং ওজন ছিল প্রায় এক ট্রিলিয়ন টন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থ অবজারভেশান মনিটর ‘কোপার্নিকাস’-এর স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি ১ হাজার ৭৭০ বর্গকিমি আয়তন জুড়ে থাকলেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রায় ৪০০ বর্গকিমি অংশ আলাদা হয়ে গেছে।
বরফখণ্ডটি ওডেল সাগরে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থির ছিল, কিন্তু ২০২০ সালে এটি মুক্ত হয়ে ‘আইসবার্গ অ্যালি’ ধরে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে। এরপর সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের কাছে এটি কিছু সময়ের জন্য স্থির হয়ে থাকলে পেঙ্গুইন ও সীলের খাদ্য সংগ্রহে বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে গত মে মাসে এটি আবার ভাসতে শুরু করে।
এখন এটি প্রবল গতিতে উত্তরের দিকে এগোচ্ছে, এবং দিনে প্রায় ২০ কিমি পর্যন্ত ভেসে চলেছে। বরফখণ্ডটির এমন আচরণ তার দ্রুত বিলীন হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এমনকি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আইসবার্গ ভাঙা স্বাভাবিক, কিন্তু মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকা থেকে বরফখণ্ড বিচ্ছিন্ন হওয়ার হার বেড়ে গেছে।’ উষ্ণ জল, শক্তিশালী ঢেউ এবং বাতাসের কারণে এটুয়েন্টিথ্রিএ-এর মতো ‘মেগাবার্গ’ গুলো আর টিকে থাকতে পারছে না।
এটুয়েন্টিথ্রিএ শৈল খণ্ডের পতন শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং এটি জলবায়ু সংকটের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর বরফখণ্ডগুলো আর নিরাপদ নয় এবং আমাদের জলবায়ু নীতিতে জরুরি পরিবর্তন প্রয়োজন।
সকাল নিউজ/এসএফ