কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লীবিদ্যুতে লাইন শ্রমিক পদে নিয়োগের দুই বছরের মাথায় থেমে গেল সোহেলের স্বাভাবিক জীবনের গতি। ২০২৩ সালে লাইন মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে পঙ্গুত্বের কবলে পড়েন লাইন শ্রমিক সোহেল রানা। দুর্ঘটনার দুই বছরেও পল্লীবিদ্যুতের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি কোনো সহায়তা।
বর্তমানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তার। পল্লীবিদ্যুৎ অফিস বলছে- হাজিরা ভিত্তিক চাকুরী হওয়ায় তাকে কোন সহায়তার নির্দেশনা নেই।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গালীরকুটি গ্রামের সোহেল রানা ২০২১ সালে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যু সমিতির আওতায় হাজিরা ভিত্তিক লাইন শ্রমিক হিসেবে চাকুরী নেন। সর্বশেষ তিনি লালমনিরহাট জোনাল অফিসে কর্মরত ছিলেন। দায়িত্বরত অবস্থায় ২০২৩ সালের ২৭ মে অফিস থেকে লালমনিরহাট চিনি পাড়ায় একটি লাইন মেরামতের সময় হঠাৎ সাবষ্টেশন থেকে ওই লাইনে বিদ্যুৎ সঞ্চালনা করলে বিদ্যুতায়িত হয়ে উপরেই আটকা পরেন সোহেল।
সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ইনিষ্টটিউটে প্রায় ৮ মাস সহায়-সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও কেটে ফেলতে হয় সোহেলের বাম হাত। অপর হাতটিও হয়ে যায় অকেজো। শরীর আর মুখে দেখা দেয় নানা জটিলতা।
দুর্ঘটনার দুই বছর পার হয়ে গেলেও পুনরায় তাকে কাজে নেয়নি পল্লীবিদ্যুৎ। করা হয়নি কোন প্রকার সহযোগিতাও। বর্তমানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অমানবিক দিনাতিপাত করছেন সোহেল রানা। তার ব্যক্তিগত জরুরি কাজগুলোও করে দিতে হয় স্ত্রী বা অন্য কাউকে। তার এই করুণ অবস্থায় দিশাহারা পুরো পরিবার। সোহেলের এই অসহায়ত্বের সময় তার চাকুরী ফেরত এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
দিন হাজিরার চাকুরীতে অক্ষম হওয়ার পর কাজে নেয়া বা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে কোন নিয়ম নেই। বলেন জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শামীম পারভেজ।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা আইন ও শালিস কেন্দ্রের আহ্বায়ক রাজু মোস্তাফিজ বলেন, ‘কর্মীরা দুর্ঘটনায় পড়লে তাদের সহযোগিতা বা ক্ষতিপূরণ না দেয়া অমানবিক। সরকারকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
পঙ্গুত্ব জীবনে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের সাথে একটু হাসি-খুশি নিয়ে বেঁচে থাকতে সোহেলর পাশে দাঁড়াবে সরকার। এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
সকাল নিউজ/এসএফ

